বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে ঝরঝরে ইংরেজিতে এক যুবক ফোন করলেন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তাকে। ওই যুবক বললেন, ‘আপনি অনেক দিন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেননি। হয় ক্রেডিট কার্ড ফেরত দিন, না হলে কার্ড ব্যবহার না করার জন্য আপনাকে ১০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ককে মেটাতে হবে!’
ফোনের অপর প্রান্তে গ্রাহক কিছু ক্ষণ চুপ রয়েছেন দেখে ওই যুবক ফের তাঁকে জানান, ‘আপনাকে কোথাও দৌড়তে হবে না। ব্যাঙ্কের এজেন্ট আপনার কাছে যাচ্ছে। তিনিই আপনার থেকে কার্ড বা টাকা নিয়ে আসবেন।’
দিন দুই পরে এক যুবক ওই ব্যক্তির অফিসে হাজির। গ্রাহক আগেই মনস্থির করেছেন, ক্রেডিট কার্ড আর তিনি ব্যবহার করবেন না। তাই নির্দ্বিধায় এজেন্টের হাতে তুলে দিলেন ক্রেডিট কার্ড। কার্ড ফেরত পাওয়া গেল বলে এজেন্ট সই করেও দিল। আর তার পরের দিনই ব্যাঙ্ক গ্রাহককে টেলিফোন করে জানাল, তাঁর ক্রেডিট কার্ডে ৪৮ হাজার টাকার সোনার গয়না কেনা হয়েছে!
গল্প নয়, এমন ভাবেই গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড হাতিয়ে বেড়াচ্ছে একদল প্রতারক। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ দাবি করেছে, এই প্রতারণা চক্রের এক পাণ্ডা ও তার সঙ্গীকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃতেরা জেরার মুখে জানিয়েছে কী ভাবে প্রতারণা করে ক্রেডিট কার্ড হাতানো হচ্ছে কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকা থেকে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ধৃতদের নাম জাভেদ ইকবাল (২৬) ওরফে রাহুল সাউ এবং অতনু ভৌমিক (২৫)। জাভেদই মূলত গ্রাহকদের বাড়ি গিয়ে ক্রেডিট কার্ড হাতিয়ে নিত। অতনু থাকত বাড়ির বাইরে। এ দিন বেহালার এক বাসিন্দার কাছ থেকে তাঁর ক্রেডিট কার্ড হাতাতে গিয়েছিল ওই দুই যুবক। ওই ব্যক্তির সঙ্গে জাভেদ দিন কয়েক আগে যোগাযোগ করে বলেছিল, ১৫ মে সে তাঁর বাড়িতে যাবে। সন্দেহ হওয়ায় বেহালার ওই বাসিন্দা লালবাজারের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ চান। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়, তিনি যেন জাভেদকে বাড়িতে ডেকে পাঠান। বাড়ির ভিতরে ও বাইরে প্রতারণা শাখার গোয়েন্দারা থাকবেন। সেই মতো গোয়েন্দারা বেহালার ওই বাড়িতে হাজির হন। জাভেদ ক্রেডিট কার্ড নেওয়া মাত্রই তাকে ধরা হয়। ধরা পড়ে তার সঙ্গীও।
গোয়েন্দারা জানান, জেরার মুখে জাভেদ স্বীকার করেছে, হরিদেবপুরের বেসরকারি এক সংস্থার কর্মী অনিমেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে গত মার্চ মাসে সে ক্রেডিট কার্ড হাতিয়ে নিয়েছে এবং সেই কার্ড ব্যবহার করে সে ওই এলাকারই একটি দোকান থেকে ৪৮ হাজার টাকার গয়না কিনেছে। অনিমেষবাবু গত ১২ মার্চ লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। মূলত সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জাভেদ ও অতনুকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় জাভেদ জানায়, সে বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের ‘ডিরেক্ট সেলস্ এজেন্ট’ ছিল। সে ওই ব্যাঙ্কের লেটারহেড প্যাড, পরিচয়পত্র নকল করে গ্রাহকদের বাড়িতে হানা দিত। এজেন্ট হওয়ার কারণে সে জানত, ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক কারা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই জাভেদ প্রতারণা করত বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
গোয়েন্দা প্রধান এ দিন জানান, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের পাঁচটি প্রতারণা হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, জাভেদের দলে আরও কয়েক জন রয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
এ দিন ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক তাদের ২১ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |