নাকতলায় একটি বেআইনি বাড়ি ভেঙে ফেলার জেরে পুরসভার এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে হেনস্থার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বাড়িটির প্রোমোটার-সহ দশ জন। এমনকী, পুলিশের সামনেই ওই ইঞ্জিনিয়ারকে খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো অফিসে ওই ঘটনা ঘটে। যাদবপুর থানার পুলিশ জানায়, পুরসভার তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে দেবাশিস সরকার নামে ওই প্রোমোটার ও তাঁর সহযোগীদের ধরা হয়। হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ধৃত দেবাশিসবাবুর সহযোগীর নাম দীপাঞ্জন দাস। এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুর-অফিসারদের শাসানো হলে কাউকেই ছাড়া হবে না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।”
দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার পুর-কমিশনার খলিল আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন পুরসভার ১৫টি বরোর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারেরা। তার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে বরোর পদস্থ অফিসার আক্রান্ত হলে বাড়ি ভাঙার কাজ করা কঠিন হবে। তাঁদের অভিযোগ, ওই প্রোমোটার ওই এলাকায় আরও ১২টি বেআইনি বাড়ি করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশকে জানানো হয়েছে। মেয়র শোভনবাবু বলেন, “ওই প্রোমোটারের ১২টি অবৈধ বাড়ির খবর পেয়েছি। ব্যবস্থা নেব। ভাঙার অভিযানও চলবে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ১০ নম্বর বরোয় ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫ বি/১ নাকতলা রোডে ওই বাড়িটি নির্মাণ করছিল এক প্রোমোটিং সংস্থা। তিনতলার নকশার অনুমোদন থাকলেও বাড়িটি চারতলা হয়েছিল। পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) বলেন, “ওই বাড়ির প্রোমোটারকে কাজ বন্ধ রাখার নোটিস দেওয়া হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় পুলিশের কাছে এফআইআর-ও করা হয়। তার পরেও কাজ বন্ধ করা যায়নি। পরে মেয়র পরিষদের বৈঠকে ওই বাড়িটি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়।”
ওই বরোর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “পুর-প্রশাসনের নির্দেশে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পাটুলি থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ওই বাড়িটি ভাঙতে যাই। তখনই প্রোমোটারের লোকজন বাধা দেয়। ওরা প্রায় ১৫০ জন ছিল। পুলিশের সামনেই ওরা রুখে দাঁড়ায়।” তিনি জানান, পুরো বিষয়টি ডিসি (এসএসডি)-কেও জানানো হয়। তাঁর দাবি, প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রোমোটারের লোকেদের বাধায় কাজ করা যায়নি। পরে সবই জানানো হয় পুরসভার প্রধান কার্যালয়ে।
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ অফিসার জানান, পুর-প্রশাসন যোগাযোগ করে কলকাতা পুলিশের এক যুগ্ম পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে। এক অ্যাসিন্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তার পরেই শুরু হয় বাড়ি ভাঙার কাজ। ১০ নম্বর বরোর এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “বাড়ি ভাঙার পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একদল দুষ্কৃতী বরো অফিসে হামলা করে। এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অশোক গুহকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওরা। তাঁকে আটকে রাখা হয়।” অশোকবাবু বলেন, “সব কিছু যাদবপুর থানার পুলিশকে জানানো হয়। দু’জন অফিসারও আসেন। কিন্তু তাঁদের সামনেই আমাকে শাসানো হয়।” পুরসভা সূত্রের খবর, এর পরে যাদবপুর থানার আইসি ঘটনাস্থলে গিয়ে অশোকবাবুকে উদ্ধার করেন।
বরো ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, কমিশনারকে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন লালবাজার থেকে পুলিশবাহিনী দেওয়া হলে তবেই বাড়ি ভাঙার মতো কাজ করবেন। তাঁদের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় থানা প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি নীরব থাকছে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের সঙ্গে কথা বলেছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৮ মে তাঁদের মধ্যে বৈঠক করার কথাও হয়েছে।
এ দিকে, কোনও একটি ওয়ার্ডে এক জন প্রোমোটার এতগুলো বেআইনি বাড়ি করল কী ভাবে, তা নিয়ে ওয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব-অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকেও শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুরসভা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে পুরসভার কংগ্রেস ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এ দিন পুর-কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। |