বীজ ভাঙা কল ও বিপণনের সুফল |
বাঁকুড়ায় সূর্যমুখী চাষের জমি বাড়ছে |
রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় • বাঁকুড়া |
সূর্যমুখীর বীজ কিনে জেলাতেই তা ভাঙিয়ে তেল তৈরি করায় উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া কৃষি দফতর। প্রশাসনের এই প্রচেষ্টায় বাঁকুড়ায় সূর্যমুখীর চাষ এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ বার জেলার ১২টি ব্লকে প্রায় ৪০০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চাষ বেড়েছে ৪০০ হেক্টর জমিতে।
সর্ষে ও তিলের সঙ্গে সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষি দফতর গত কয়েক বছর ধরে চাষিদের উত্সাহ দিয়ে আসছে। বাঁকুড়া জেলাতেও কিছু চাষি সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সর্ষে বা তিলের মতো সূর্যমুখীর বীজ বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় এবং ওই বীজ ভাঙিয়ে তেল তৈরির উপযোগী মিল না থাকায় চাষিদের উত্সাহে ভাটা পড়ে। কৃষি দফতর শেষে চাষিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
চাষিদের কথায়, সর্ষে চাষের অন্যতম প্রধান বাধা হল ‘শিকড় ফোলা’ রোগ। এই রোগ রুখতে অনেক টাকার রাসায়নিক ওষুধ ও সারের প্রয়োজন। তিল চাষের খরচও কম নয়। তিল চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এতে তিলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সে তুলনায় সূর্যমুখীতে রোগের বালাই অনেক কম। ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে কম। বাঁকুড়া ১ ব্লকের রামনগর এলাকার চাষি মানিক কারক, মোলবনার চাষি কার্তিক সাঁতরা বলেন, “সর্ষের তুলনায় সূর্যমুখীর ফলনও প্রায় দেড় গুণ বেশি। সূর্যমুখী চাষে জল কিছুটা বেশি লাগলেও, আখেরে এই চাষে লাভই আছে।” সূর্যমুখী চাষে লাভের পাল্লা ভারি হওয়ায় সে দিকেই তাই মন ঝুঁকেছে চাষিদের। কিন্তু এত দিন বিপণনেই মার খেয়েছে এই চাষ। কেন? |
বাঁকুড়া শহর লাগোয়া বেলিয়ার চাষি দেবাশিস মণ্ডল, বদড়ার নিতাই তারা কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখীর চাষ করে আসছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা, “চাষের পরে সূর্যমুখীর বীজ কেনার লোক ছিল না। কারণ ওই বীজ ভাঙানোর উপযুক্ত মিল নেই। নিজেরাই বাড়ির রান্নার জন্য সূর্যমুখীর বীজ ঘানিতে ভাঙাতাম। তাতে তেলের গুণগত মান যেমন খারাপ হত, তেমনই তেল নষ্টও হত। তাই সামান্য জমিতে চাষ করতাম।” কৃষি দফতর জানাচ্ছে, গত বছর এই জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়। এ বার চাষ শুরু আগেই চাষিদের ওই সমস্যাগুলি দূর করতে উদ্যোগী হয় কৃষি দফতর।
জেলার উপকৃষি অধিকর্তা অনন্তনারায়ণ হাজরা বলেন, “রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় সিমলাপাল ব্লকের বিক্রমপুর, বাঁকুড়া-১ ব্লকের কেঞ্জাকুড়ায় ও সোনামুখীর রাধারমনপুরে তিনটি সমবায় সমিতিতে সূর্যমুখী বীজ ভাঙানোর মিল তৈরি করা হচ্ছে। চলতি মাসেই ওই তিনটি মিল চালু হচ্ছে। ওই সমবায়গুলিই চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি সর্ষের বাজার চলতি দামে সূর্যমুখীর বীজ কিনে নেবে।” শুধু তাই নয়। সূর্যমুখীর তেল বিক্রির ব্যাপারেও সুষ্ঠু ভাবনাচিন্তা করছে প্রশাসন। অনন্তনারায়ণবাবু জানান, কৃৃষি বিপণন দফতর ও সমবায় দফতরের মাধ্যমে সূর্যমুখীর বীজ থেকে উত্পাদিত তেল প্যাকেজিং করে বিপণনেরও ব্যবস্থা করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, বাঁকুড়া শহরের সমবায় বিপণিকে ওই তেল বিক্রি করা হবে।
প্রশাসনের ওই ভাবনাই এ বার বাড়িয়ে দিয়েছে সূর্যমুখী চাষের ক্ষেত্র। জঙ্গলমহলের সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা, রানিবাঁধ- সহ বড়জোড়া, শালতোড়া, বাঁকুড়া-১, ওন্দা, ইন্দাস, পাত্রসায়র, জয়পুর ও সোনামুখী ব্লকে এ বার সূর্যমুখী চাষ অনেকটাই বেড়েছে। চাষি মানিক কারক বলেন, “কৃষি দফতরই বীজের জোগান দেয়। এত দিন শুধু বাড়ির জন্য ১২ কাঠা জমিতে চাষ করতাম। এ বার ব্যবসায়িক লাভের জন্য ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।” কার্তিক সাঁতরা জানান, আগে তিনি ১০ কাঠা জমিতে চাষ করতেন। এ বার তাঁর ১ বিঘা জমিতেই ফুটেছে সূর্যমুখীর ফুল।
|