প্রাপকদের হাতেই পথে পাকড়াও লগ্নি-কর্ণধার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সন্ধ্যার জমজমাট পার্ক স্ট্রিটে তাঁকে দেখে চমকে উঠেছিলেন কয়েক জন পথচারী। মাসখানেক ধরে তো ওঁকেই খুঁজছেন তাঁরা। কিন্তু উনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। আর তো ছাড়া যায় না। কিছুটা পিছনে পিছনে গিয়ে থানার কাছাকাছি পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে ধরলেন পথচারীরা। লোকটিকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে পথচারীরা জানালেন, ইনিই সোনারপুরে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার পলাতক ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ভাবেই আমানতকারীদের হাতে ধরা পড়লেন ‘নীল আকাশ অ্যাগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার কর্ণধার হিমাদ্রি কুণ্ডু। পরে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ তাঁকে তুলে দেয় সোনারপুর থানার হাতে। পুলিশি সূত্রের খবর, হিমাদ্রি বছর তিনেক ধরে সোনারপুর এলাকায় একটি অর্থ লগ্নি সংস্থা খুলে আমানত সংগ্রহ করছিলেন। তাঁর সংস্থার অফিস ছিল সোনারপুরের ঘাসিয়াড়া এলাকায়।
আমানতকারীরা জানান, মাস দুয়েক আগে বেশ কয়েক দিন সংস্থার অফিসের দরজা না-খোলায় তাঁদের সন্দেহ হয়। হিমাদ্রি তখন ঘাসিয়াড়াতেই তাঁর অফিসের পাশে একটি বহুতলে থাকতেন। আমানতকারীদের অভিযোগ, তাঁরা হিমাদ্রির কাছে আমানত ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাঁদের টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তার পর থেকে টাকা ফেরত তো দূরের কথা, অফিসের দরজাই আর খোলেনি। এক আমানতকারী বলেন, “আশ্বাস পেয়ে টাকা তুলতে যত বার ওঁর অফিসে গিয়েছি, প্রতি বারেই দেখেছি, দরজা বন্ধ।” অভিযোগ, দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে হিমাদ্রির সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে রয়েছে।
আমানতকারীরা জানান, অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও প্রথম দিকে হিমাদ্রি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিও দিতেন। কিন্তু মাসখানেক আগে হঠাৎই এক দিন তিনি ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর হদিস না-মেলায় তাঁরা বুঝে যান, হিমাদ্রি পাকাপাকি ভাবে চম্পট দিয়েছেন। এর মধ্যেই সুদীপ্ত সেনের লগ্নি সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অন্যান্য লগ্নি সংস্থা নিয়েও আমানতকারীদের সন্দেহ ও দুর্ভাবনা বাড়তে থাকে। হামলাও হয় কয়েকটি সংস্থার দফতরে। হিমাদ্রির সংস্থার আমানতকারীরা তার পরেই সোনারপুর থানার দ্বারস্থ হন।
কিন্তু হিমাদ্রির খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে খাস কলকাতার পথে আচমকাই আমানতকারীরা হাতে পেয়ে গেলেন তাঁকে। পুলিশ জানিয়েছে, পার্ক স্ট্রিট থানা থেকে হিমাদ্রিকে সোনারপুরে নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বছর তিনেক ধরে সোনারপুর এবং লাগোয়া এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিল হিমাদ্রির সংস্থা। |