সূর্যমুখী চাষ জনপ্রিয় করতে
উদ্যোগ কৃষি দফতরের
ধান-পাটের বিকল্প হিসেবে উত্তর ২৪ পরগনায় সূর্যমুখী চাষ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা কৃষি দফতর। এ জন্য চলতি মরসুমে চারটি মহকুমার ১০০ হেক্টর জমিতে দফতরের উদ্যোগে ওই চাষ করানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার চাষিদের ওই খেতগুলিতে এনে সূর্যমুখী চাষের উপযোগিতা এবং তা যে লাভজনক, তা বোঝানো হচ্ছে।
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) উজ্জ্বল সরকার বলেন, “জেলায় সব ধরনের তৈলবীজের চাষ মাত্র ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে হয়। সেই কারণে আমাদের লক্ষ্য এখানে সূর্যমুখী চাষ বাড়ানো। এই কাজ এখানও জেলায় সে ভাবে ছড়ায়নি। সূর্যমুখীর তেল সর্ষের তেলের থেকেও স্বাস্থ্যসম্মত এবং চাষটি খুবই লাভজনক। সেই কারণেই ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর প্রদর্শনী কেন্দ্র করা হয়েছে।”
উত্তর ২৪ পরগনায় যে একেবারেই সূর্যমুখী চাষ হয় না, এমন নয়। জেলা কৃষি দফতরের হিসেবে, প্রতি বছর কমবেশি হাজার হেক্টর জমিতে ওই চাষ হয়। সেই পরিমাণই আরও বাড়াতে চায় কৃষি দফতর। এ জন্য চলতি মরসুমে বসিরহাট মহকুমায় ৬৩ হেক্টর, বনগাঁ মহকুমায় ১৭ হেক্টর এবং বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের ‘প্রদর্শনী’র ব্যবস্থা করা হয়েছে কৃষি দফতরের তরফে। জেলার কিছু চাষিকে নির্দিষ্ট করে তাঁদের জমিতেই সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। চাষের জন্য বীজ, সার সবই নিখরচায় দিয়েছে জেলা কৃষি দফতর। বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শান্তিরঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, কৃষি-প্রযুক্তি সহায়কদের তত্ত্বাবধানে চাষ হচ্ছে ওই ‘প্রদর্শনী কেন্দ্র’গুলিতে। উৎপাদিত ফসল সংশ্লিষ্ট চাষিরাই পাবেন।
হাবরার রাউতারার নবকুমার ঘোষের চার বিঘা জমিতে এ বার কৃষি দফতরের উদ্যোগে ওই ‘প্রদর্শনী কেন্দ্র’ হয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
নবকুমারবাবু মূলত সব্জি চাষি। সব্জি চাষে শীতের মরসুমে সে ভাবে ফসলের দাম পাননি। কিন্তু সূর্যমুখী চাষে তিনি খুশি। তাঁর আশা, বিঘাপ্রতি সূর্যমুখী চাষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। তিনি বলেন, “এ বারই প্রথম সূর্যমুখী চাষ হল আমার জমিতে। কৃষি দফতর এই চাষের ব্যাপারে আমাকে বুঝিয়েছিল। তাতে আমি রাজি হই। এখন দেখছি, এটা লাভজনক। ভষিষ্যতেও সূর্যমুখী চাষ করব।” একই বক্তব্য আমডাঙা ব্লকের এক চাষিরও।
‘প্রদর্শনী কেন্দ্র’ বাদ দিয়ে বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমায় এ বার সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ৭১ হেক্টর জমিতে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চাষিরা বীজ পুঁতেছিলেন। নিখরচায় তাঁদের বীজ, সার, অনুখাদ্য এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য দিয়েছে কৃষি দফতর। হাবরার সংহতি স্টেশনের কাছে এ বার প্রথম নিজের দু’বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে উৎসাহিত তমালকান্তি বিশ্বাস।
তিনি বলেন, “আমার জমিতে বোরো ধান আর পাট ছাড়া আর কিছু হয় না। জমি নিচু হওয়ায় বছরের কয়েক মাস জলমগ্ন থাকে। বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করেছি। মার্চের শেষে বা এপ্রিলের গোড়ায় ফসল উঠবে। মনে হচ্ছে ভালই লাভ হবে।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়তে থাকায় এই চাষের প্রসার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন এলাকার লবণাক্ত জমিতেও এই চাষ সম্ভব। তাপমাত্রার হেপফেরে চাষে ক্ষতি বা রোগপোকার আক্রমণ হয় না। গত মরসুমে হাবরা-১ ব্লকে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল ৩০ বিঘা জমিতে।
এ বার সেটা বেড়ে হয়েছে ৭০ বিঘা। ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত পাল বলেন, “সূযর্মুখী চাষের খরচ খুবই কম। বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকাতেই সূর্যমুখী চাষ করা যায়। লাভ প্রায় ১৫ হাজার টাকা হয়। এই চাষে জলও কম লাগে।” সংশ্লিষ্ট চাষিরা মনে করছেন বিপণন ব্যবস্থা আরও জোরদার হলে সূর্যমুখী চাষেরও প্রসার ঘটবে জেলায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.