ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির হিসেব মেনে নয়। শিকড়ের আবেগ মেনেই পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। কারণ সেই ভাবমূর্তির সমস্যা। যা এখনও নতুন বিনিয়োগকারীদের রাজ্য থেকে দূরেই সরিয়ে রাখছে।
সিআইআই ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর বৃহস্পতিবার পেশ করা রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। বিনিয়োগ টানার জন্য দক্ষ মানবসম্পদ, কাঁচা মাল, বিদ্যুৎ-সহ সব উপাদানই রাজ্যে মজুত। কিন্তু বাদ সাধছে স্বচ্ছ জমি নীতির অভাব, প্রশাসনিক গড়িমসি, দুর্বল পরিকাঠামো ও নিয়ম-কানুনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর এ সব প্রতিকূলতাই তৈরি করছে ভাবর্মূতির সমস্যা।
১৯৯৬-’৯৭ সালের সিআইআই পার্টনারশিপ সামিটে আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের সামনে এই ভাবমূর্তির সমস্যা প্রকাশ্যে এনেছিল বিগত রাজ্য সরকার। এর পরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পরবর্তী সময়েও সিআইআই-এর ২০০৯ সালের রিপোর্ট একই সমস্যাকে লগ্নি টানার পথে অন্যতম অন্তরায় হিসাবে তুলে ধরেছিল। রাজ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও ২০১২ সালের রিপোর্ট বলছে ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।
নাড়ির টানেই এ রাজ্যে ব্যবসা করছেন ৬২% ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক হিসেব-নিকেশ নয়। আবেগটাই তাঁদের কাছে বড়। নিছক ব্যবসায়িক লাভের জন্য এ রাজ্য ছেড়ে যাননি যাঁরা, তাঁদের সংখ্যা তুলনায় বেশ কম, মাত্র ৩১%। ‘ইনভেস্টর্স পারসেপশন’ শীর্ষক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
আর এ প্রসঙ্গে ফের উঠে এসেছে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বর্তমান সরকারের নীতি। ১০০% উত্তরদাতা জানিয়েছেন জমি পেতে চাই রাজ্যের সহায়তা। ৫৪% জানিয়েছেন জমি নিয়ে অনিশ্চয়তার দরুন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা আটকে আছে। লগ্নিকারীদের মধ্যে জমি নিয়ে ধোঁয়াশা দূর করতে সিআইআই-এর দাওয়াই সার্বিক একটি জমি নীতি প্রণয়ন। এবং বড় বিনিয়োগ টানতে বড় জমি জোগাড়ের ক্ষেত্রে রাজ্যের সক্রিয় ভূমিকাও জরুরি, মনে করছে বণিকসভা।
ভাবমূর্তির সমস্যায় যুক্ত হয়েছে প্রশাসনিক গড়িমসিও। ৬৪% উত্তরদাতা জানিয়েছেন লগ্নি-পরিবেশ উন্নত করতে চাই প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা। প্রকল্পের মান বিচার করে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হবে। নচেৎ লগ্নিকারীর আস্থা পাওয়া কঠিন বলে মনে করছে রিপোর্ট। এই দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে ৯১% ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতার বাজারে মার খেয়েছেন। এ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন স্বয়ং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, সমাধানসূত্র হিসেবে ৯৯ পাতার ‘ফর্ম’ ১৫ পাতায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে তা আরও হালকা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এরই মধ্যে রয়েছে আশার রুপোলি রেখা। ৭০% লগ্নিকারী জানান ব্যবসা বিস্তারে এ রাজ্যকেই বেছে নিতে চান তাঁরা। তবে তাঁদের ক’জন নাড়ির টানে, আর ক’জন ব্যবসায়িক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেবেন, তা স্পষ্ট নয়। |