টাকার দামে পতন, বিশ্ব বাজারে মন্দা ভাব এবং সিএজি-র খসড়া রিপোর্টে কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে অনিয়ম প্রকাশ্যে আসা এই ত্র্যহস্পর্শের জেরেই বৃহস্পতিবার ৪০৫ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাজেটের পর শেয়ার বাজার কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। বাজেটের পর চার দিন লেনদেন হয়েছে শেয়ার বাজারে। ওই চার দিনের মধ্যে সূচক দু’দিন উপরে উঠেছে, আবার পড়েছেও দু’দিন। নিট হিসাবে সেনসেক্সের পতন ২৬৩.৭৩ অঙ্ক। বৃহস্পতিবারই তা পড়েছে ৪০৫.২৪ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক দাঁড়িয়েছে ১৭,১৯৬.৪৭ অঙ্কে।
বাজার সূত্রের খবর, তার উপর এ দিন টাকার দামের পতন শেয়ার সূচককে টেনে নামানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি সিএজির এক খসড়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থাকে কয়লা ক্ষেত্র বণ্টন করতে গিয়ে কেন্দ্রের মোটা অঙ্কের লোকসান হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই সময়ে মোট ১০০টি সংস্থাকে কোনও নিলাম ছাড়াই কয়লা ক্ষেত্র বণ্টন করেছে কেন্দ্র। এতে সরকারের লোকসান হয়েছে ১০.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা। এই খবররের বিরূপ প্রভাব এ দিন শেয়ার বাজারের উপর পড়েছে। এই দিন টাকার দামেও উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। দাম পড়েছে ৫০ পয়সা। পতনের পর প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫১.১৭/১৮ টাকা। গত ১৬ জানুয়ারির পর এত নীচে টাকার দাম নামেনি।
এ প্রসঙ্গে আবীরা সিকিউরিটিজের সিইও লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন বলেন, “দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা, টাকার দাম আরও পড়তে পারে।” বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সঠিক প্রমাণিত হলে দেশের আমদানি খাতে খরচ দ্রুত বাড়বে। বিশেষ করে সমস্যা হবে তেল আমদানির ক্ষেত্রে। আমদানি খরচ বাড়লে এক দিকে টান পড়বে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে। অন্য দিকে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির হারের উপরও। যা শেয়ার বাজারে প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের শেয়ার বাজারে অবশ্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি বিনিয়োগের বহর বাড়িয়েছে। ফলে সূচক উপরের দিকে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রীনিবাসনের মতো বাজার বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বিদেশি লগ্নির সুবাদে সূচকের উত্থানে স্বস্তি পেতে নারাজ। শ্রীনিবাসন বলেন, “দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জেরে বাজার চাঙ্গা হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি না-হলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা কম। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি বিনিয়োগের উপর ভরসা করা কঠিন। কারণ, বিশ্ব বাজারে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে ওই সব সংস্থা আপাতত বাধ্য হয়েই ভারতের বাজারে লগ্নি করছে। কিন্তু যে মুহূর্তে অন্য দেশে লগ্নির পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হবে, তখনই ওই সব সংস্থা রাতারাতি ভারতের বাজার থেকে লগ্নি তুলে অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারে।” |