ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ আরও সঙ্কটে। এই প্রকল্পে লগ্নি করা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে জাপানি বিনিয়োগকারী সংস্থা। প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ‘কলকাতা মেট্রো রেল নিগম’ (কেএমআরসি)-কে লিখিত ভাবে এ কথা জানিয়েছে তারা। এমনিতেই প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে। বেড়েছে খরচ। এই অবস্থায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ, বুধবার দিল্লিতে কেএমআরসি-র পরিচালনমণ্ডলীর সদস্যেরা বৈঠক করবেন।
২০০৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সল্টলেক থেকে হাওড়া ১৪.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ। এর জন্য প্রস্তাবিত ৪৮৭৪.৫৯ কোটি টাকার মধ্যে ২২৫৩ কোটি টাকা যৎসামান্য সুদে ঋণ দিতে রাজি হয় ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জিকা)। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের। রাজ্যে ক্ষমতায় এসে নয়া সরকার এই প্রকল্পে বিনিয়োগের দায় থেকে সরে আসতে চায়। গত ২৩ অগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরে ঠিক হয়, ঋণ বাদে প্রকল্প-ব্যয় কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক ৭৪ শতাংশ ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২৬ শতাংশ বহন করবে।
সমস্যা জটিল হয় রাজ্য গত বছর এই প্রকল্পের পরিমার্জিত মানচিত্র দাখিল করার পরে। এই মানচিত্রে মধ্য কলকাতার বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটকে ছাড় দেওয়া হয়। কেএমআরসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দিওয়ানজি সম্প্রতি বলেন, “বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তবেই নকশা চূড়ান্ত হয়েছিল। আমরা বারবার, নানা ভাবে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এতে পরিমার্জন সম্ভব নয়। ওরা মনোভাব বদলায়নি।” ফলে কিছু অংশে প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে।নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হেমন্তকুমার শর্মা মঙ্গলবার বলেন, “কিছু দিন আগে আমরা ‘জিকা’র চিঠি পেয়েছি। প্রকল্প-পথের প্রস্তাবিত পরিমার্জন ও কাজের হালে ওরা অত্যন্ত অখুশি।” এই অবস্থা চলতে থাকলে ওরা ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সঙ্গে না-ও থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন হেমন্তবাবু।
এই অবস্থায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কেএমআরসি-র কর্তারা। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “কেবল উন্নয়নশীল দেশের জনমুখী প্রকল্পের জন্য ‘জিকা’ এত সহজ শর্তে ঋণ দেয়। আবেদনকারীরা সকলেই এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায়। আমরা পারলাম না।” পরিস্থিতি না-বদলালে ৩০ জুনের পরে ‘জিকা’ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে প্রকল্পে ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ‘জিকা’ হাত গুটোলে বিপুল খরচ কে দেবে?”
প্রথমে ঠিক ছিল, সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ৯.৩৬ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হবে ২০১৩-র অগস্টে। ছ’টি স্টেশন-সহ এই অংশের ৫.৫৯ কিলোমিটার হচ্ছে স্তম্ভের উপর দিয়ে। বাকিটা ভূগর্ভে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪-র অক্টোবরে। গত সেপ্টেম্বরে এই দুই লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে হয় যথাক্রমে ২০১৫-র জানুয়ারি ও ২০১৬-র সেপ্টেম্বর। কেএমআরসি-র মতে, “মানচিত্রের পুনর্বিন্যাস নিয়ে ধন্দে হাওড়ার দিকের কাজ আটকে। কোনও আশার আলো দেখাতে পারছি না।”
যাত্রাপথ চূড়ান্ত করার আগে পুনর্বাসনের সমস্যা, কারিগরি সম্ভাব্যতা এবং পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি ভাল ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এটা এখন ভারত সরকারের প্রকল্প। সব দিক ভেবে তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” ক’মাস আগেও কেএমআরসি-র এমডি ছিলেন তৎকালীন পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা। তাঁর বক্তব্য, “প্রকল্প-পথ পরিমার্জন নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। রূপায়িত করা বা না-করা কেএমআরসি-র ব্যাপার।” কেএমআরসি-র বক্তব্য, “পরিমার্জনের ফলে প্রকল্পের দৈর্ঘ্য বাড়বে। হবে বাড়তি একটি স্টেশন। খরচ বাড়বে ৫৫০ কোটি।” এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, “রাইটস-এর মতো সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষার পরেই নয়া পথের প্রস্তাব দিয়েছি। এটার বাস্তবতা নেই, এ কথা মানি না।”
|