আইন অমান্য আন্দোলন করতে নেমে পুলিশকে পেটানোর অভিযোগ উঠল এসইউসি-র ছাত্র, যুব এবং মহিলাদের একাংশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট এবং নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ওই ঘটনা ঘটে। সারদা-কাণ্ডে আমানতকারীদের টাকা ফেরানো-সহ দশ দফা দাবিতে এ দিন আইন অমান্যের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
সংগঠনের বিশৃঙ্খল ও অশান্ত কর্মী-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে এ দিন মৃদু লাঠিও চালাতে হয়। পুলিশের দাবি, তাতে কেউ আহত হননি। পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, এসইউসি-র কয়েক জন কর্মী লাঠি ও ইট দিয়ে মেরে গুরুতর জখম করেছেন শ্যামপুকুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর আদিত্য মুখোপাধ্যায়কে (৫০)। তিনি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। পুলিশের দাবি, এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। তখনই ব্যারিকেড সামলানোর দায়িত্বে থাকা আদিত্যবাবু আহত হন। তাঁর মাথার পিছনে আঘাত লাগে। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বেল-ভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এ ছাড়াও কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার-সহ চার পুলিশকর্মী এসইউসি-র কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন বলে খবর। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের দাবি, আইন অমান্যকারীরা আচমকা এই কর্মসূচির জন্য নির্দিষ্ট পথ বদল করাতেই ঝামেলা বাধে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “যারা এ ভাবে শৃঙ্খলা ভেঙে আইন অমান্য আন্দোলন করবে, ভবিষ্যতে তাদের এই ধরনের আন্দোলন করার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।” |
 |
 |
মারমুখী এসইউসি সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। |
|
এসইউসি-র আইন অমান্য আন্দোলন নিয়ে এ দিন কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রিপোর্ট দেন। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে বলা হয়, যে পথ ধরে সংগঠনের কর্মীদের ফিয়ার্স লেনের সামনে জড়ো হয়ে আইন অমান্য করার কথা ছিল, সেই পথে না গিয়ে তাঁরা অন্য রাস্তা ধরে এগোতে থাকেন। তখন পুলিশকে বাধা দিতে হয়। তার জেরেই ওই সাব-ইনস্পেক্টরকে লাঠি ও ইট দিয়ে মারা হয় বলে পুলিশের অভিযোগ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “বেআইনি ভাবে জড়ো হওয়া, পুলিশকে মারধরের অভিযোগে এসইউসি-র সাত কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদের খোঁজ চলছে। যাঁরা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, দরকারে তাঁরাও গ্রেফতার হবেন।”
পুলিশের দাবি, কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল করে কলেজ স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ফিয়ার্স লেনে আসার কথা ছিল এসইউসি-র হাজার তিনেক কর্মীর। কিন্তু কলেজ স্ট্রিট থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে না ঢুকে মিছিলকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে ঢুকে পড়েন। তাতেই বিপত্তি বাধে।
তবে এসইউসি-র পাল্টা দাবি, তারা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে আইন অমান্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রথমে তাদের সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারে কেবল সভা করতে বলে। পরে কলেজ স্কোয়্যারে সভা করে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে আইন অমান্য করার অনুমতি দেয়। তাতে রাজি হওয়া মাত্র পুলিশ বলে, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট নয়, ফিয়ার্স লেনে আইন অমান্য করতে হবে। এই টালবাহানার পরে দলীয় কর্মীরা বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেই আইন অমান্য করেন। এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর বক্তব্য, “বুধবার রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে। ডিএসও বৃহস্পতিবার ছাত্র-ধর্মঘটের ডাকও দিয়েছে।” পুলিশকে মারার অভিযোগ অস্বীকার করেন সৌমেনবাবু। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে ছাত্রেরা জমায়েত করলে পুলিশ যদি তাতে লাঠি চালায়, তা হলে তা আপত্তিকর। আমরা নিন্দা করছি।” |
জখম পুলিশকর্মী আদিত্য মুখোপাধ্যায়। |
লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১২টার পরে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দফায় দফায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এসইউসি-র ছাত্র, যুব ও মহিলা কর্মীরা কলেজ স্কোয়্যারে জড়ো হন। মিছিল কলেজ স্কোয়্যার থেকে এগোতেই ফিয়ার্স লেনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্তাদের কাছে খবর যায়, ওই মিছিল ডোরিনা ক্রসিংয়ে-ও যেতে পারে। এ কথা শোনার পরেই লালবাজারের কর্তারা ফিয়ার্স লেন এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থল থেকে পুলিশের একটি বাহিনীকে ডোরিনা ক্রসিংয়ের দিকে পাঠিয়ে দেন। সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশও। বিকেল তিনটে নাগাদ হঠাৎই এসইউসি-র মিছিলটি নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে ঢুকে পড়ছে দেখে লালবাজারের কর্তারা সেখানে ছোটেন। এক সময়ে কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয় পুলিশের। মিছিলকারীদের দিকে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে ধেয়ে গেলেও বিক্ষোভকারীরা নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ধরে এগোতে থাকায় পুলিশ মৃদু লাঠি চালিয়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
এ দিন বিকেলে আহত পুলিশ অফিসারকে দেখতে নার্সিংহোমে যান পুলিশ কমিশনার। লালবাজার সূত্রের খবর, এসইউসি-র কর্মীদের বিরুদ্ধে বৌবাজার থানার পুলিশের দায়ের করা মামলাটি লঘু করে না দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বেলঘরিয়ার রথতলার বাসিন্দা আদিত্যবাবুর অবস্থা স্থিতিশীল বলে নার্সিংহোম সূত্রের খবর।
|