আয় বাড়িয়ে স্বাবলম্বী হতে এ বার সরকারের বিভিন্ন দফতরের ঘরে ঘরে গিয়ে কাজ চাইছে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি)। সম্প্রতি মহাকরণে বিভিন্ন দফতরের সচিবকে সংস্থার পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে যে কোনও ধরনের নির্মাণ প্রকল্পের বরাত দেওয়ার জন্য আর্জি জানাচ্ছেন সংস্থার কর্তারা।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী এবং কেআইটি-র চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানান, কলকাতার উন্নয়নের পিছনে কেআইটি-র বিশেষ অবদান রয়েছে। সম্প্রতি বিধানসভায় কেআইটি আইনের সংশোধন এনে ১০০ বছরের পুরনো এই সংস্থাটির হাতে বেশ কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে সংস্থা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে আয় বাড়ানোর জন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বরাত ধরতে।
কেআইটি-র পরিচালন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি বিধানসভায় ১৯১১ সালের কেআইটি আইনের সংশোধনী আনা হয়। ব্রিটিশ আমলের ওই আইনের নানা বিধি-নিষেধের কারণে কেআইটি-র স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক বাধা ছিল। পদস্থ কোনও কর্তার পক্ষে ছোট কোনও বিষয়ে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া তো দূরস্থান, বিশেষ প্রয়োজনে হাজারখানেক টাকাও অনুমোদন করার ক্ষমতা আইনে ছিল না। কোনও অর্থ মঞ্জুর করতে গেলে ‘অ্যাপ্রুভাল কমিটি’-র কাছে পাঠাতে হত। বিধানসভায় সংশোধনী বিলটিতে কেআইটি-র মাথায় এক জন চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি ওই সমস্ত বহু বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই সংশোধনীর সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।
কেআইটি-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার লিয়াকত আলির দাবি, তাঁদের সংস্থায় বহু অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতিবিদ রয়েছেন। যেহেতু সংস্থার হাতে এখন বড় প্রকল্পের বিশেষ কাজ নেই, তাই সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাজ চাওয়া হচ্ছে যাতে আয় বাড়ানো যায়। হাসপাতাল, কলেজ, স্কুল-সহ সরকারের যে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজেও তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে আলি জানান। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, “কেআইটি আইনে কিছু সংশোধন এনে সংস্থাটি যাতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে আমাদের এখন চেষ্টা করতে হচ্ছে কাজ জোগাড় করার। সে কারণেই সরকারি দফতরগুলির কাছে যাওয়া হচ্ছে।”
নগর কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, বই, মানচিত্র কেআইটি-র হাতে রয়েছে। এ ছাড়াও কলকাতার মধ্যে ও শহরতলিতে প্রচুর জমিও রয়েছে। আছে সার্ভেয়ার, ভ্যালুয়েশন বিভাগ। যা অন্য অনেক সরকারি দফতরে নেই। বহুতল বাড়ি, রাস্তা, ব্রিজ, প্রেক্ষাগৃহ-সহ নানা নির্মাণ কাজেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে কেআইটি-র। এইগুলিকে মূলধন করেই সংস্থা কর্তৃপক্ষ এখন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পেতে সরকারের ঘরে নিজেদের বিপণনে নেমেছেন বলে জানা গিয়েছে।
কেআইটি কর্তাদের বক্তব্য, শহরে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। গঙ্গার পাড় সাজানোর পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন রাস্তা, সরোবর সাজিয়ে তোলারও কাজ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন নগর কলকাতাকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে। সেই কাজের কিছু বরাত যদি তাঁরা পান তা হলে তাঁদের আয় আরও খানিকটা বাড়তে পারে।
মহাকরণ সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কেআইটি-র বার্ষিক আয় ৪০-৫০ কোটি টাকার মতো। আয় বলতে কেআইটি-র ফ্ল্যাটগুলি থেকে ভাড়া ও কিছু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। যা আয়, তার ১০-১২ কোটি চাকা খরচ হয় উন্নয়নমূলক কাজে। বাকি অর্থ কর্মীদের বেতন ও পেনশন দিতে লাগে। আগামী দিনে কেআইটি যাতে কেএমডিএ বা পিডব্লিউডি-র মতো কাজ করতে পারে, সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি মহলের দাবি। |