জন্মের ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই মায়ের কোলছাড়া হয়ে গিয়েছিল শিশুটি। নাগাড়ে কেঁদেছে সে। কিন্তু মা কোথায়? সেই সদ্যোজাতকেই শেষ পর্যন্ত মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ। কান্না থামল ছেলের।
ছেলে ফিরে পেয়ে চোখ মুছে রেণুকা বিবিও বলছেন, “বুকের ভিতরটা জুড়ালো!”
হাসপাতাল থেকে এখনও ছাড়া পাননি তিনি। সোমবার সকালে হাসপাতালের শয্যায় সদ্যোজাতকে বুকে জড়িয়ে রেণুকা বিড়বিড় করেন, ‘‘আর কিছুতেই তোকে কোল ছাড়া করব না।’’ জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, ‘‘সদ্যোজাত শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এক মহিলা-সহ তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’ |
তবে, বারো ঘণ্টার এই নিখোঁজ নাটক শেষে স্বস্তি ফিরলেও করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের লজ্জা যেন আড়াল করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের সুপার রাজীব ঘোষ বলছেন, ‘‘রবিবার যে সমস্ত কর্মী ও চিকিৎসক হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের সকলকেই আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানতে চাওয়া হচ্ছে। তার লিখিত কপিও পাঠিয়ে দেওয়া হবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। তবে এই ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে শুরু করে কারও কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
রবিবার দুপুরে ওই সদ্যোজাত নিখোঁজ হওয়ার পরে হাসপাতালের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন চিকিৎসক সমর বিশ্বাস। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা নতিডাঙার পাঞ্জাতুন শেখ ও মুরুটিয়ার শিকারপুর এলাকার সামসুন্নেহার বিবি ও শরিফুল শাহ। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রবিবার বিকেলেই পুলিশ খবর পায় যে ঘটনার গোড়া থেকেই জড়িত রয়েছে পাঞ্জাতুন। তাকে চেপে ধরতেই সে ওই দম্পতির নাম বলে দেয়।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে সামসুন্নেহার বিবির দুই মেয়ে রয়েছে। সে পাঞ্জাতুনকে বলে কোন সদ্যোজাত ছেলের খোঁজ থাকলে সে দত্তক নেবে। এরপর পাঞ্জাতুনই বাকি দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। সে রেণুকাকে বলে তার পুত্রসন্তান হলে সে যেন পাঞ্জাতুনকে দিয়ে দেয়। ধৃতদের দাবি, প্রথমে রেণুকা রাজিও ছিলেন কিন্তু সন্তান প্রসবের পরেই তিনি বেঁকে বসেন। পুলিশ জানতে পেরেছে এরপরেই রবিবার দুপুরে রেণুকার শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে হাসপাতালের শয্যা থেকে তার সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে প্রথমে মুর্শিদাবাদের বৈষ্ণবপাড়া ও হোগলবেড়িয়ার তারাপুর হয়ে পরে শিকারপুরে নিজের বাড়িতে যায় সামসুন্নেহার। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। রবিবার সেখান থেকেই নিখোঁজ সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে পুলিশ।
|