সবই ছিল, এখন আর কিছুই নেই। বছর পনেরো আগেও যে গড়াইমারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হত, সেখানে এখন উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা তো দূরের কথা শুধু ব্যান্ডেজ আর তুলো ছাড়া কিছুই মেলে না। ঘোড়ামারা গড়াইমারি এলাকার প্রায় পনেরোটি গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। একটা সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ছ’টি শয্যা। নার্স থেকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী সবই ছিল। হাসপাতাল চত্ত্বরেই থাকতেন চিকিৎসক। সব সময় পাওয়া যেত তাকে। কিন্তু এখন সবই অতীত।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন সবেধন নীলমণি একজন চিকিৎসক। তাও তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোয়ার্টারে থাকেন না। করিমপুর থেকে আসেন তিনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র নার্সও থাকেন করিমপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহে তিন-চার দিন সকাল ১০টায় এসে ১২টাতেই বেরিয়ে যান চিকিৎসক ও নার্স। স্থানীয় বাসিন্দা আরমান বিশ্বাস বলেন, “বছর পনেরো আগেও প্রয়োজনে সবসময় চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যেত। কিন্তু এলাকায় সমাজবিরোধীদের দাপট বাড়ায় ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। সমস্ত পরিষেবাই একে একে বন্ধ হয়ে যায়।” |
স্বাস্থ্যকর্মীরা না থাকার দরুণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনেরও ভগ্ন দশা। গড়াইমারী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের বাগবুল ইসলাম বলেন, “এলাকায় অস্থিরতার জন্যই হাসপাতালের এই অবস্থা। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আমরা চাই চিকিৎসকরা নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসুন। মানুষ যাতে ঠিক মতো পরিষেবা পায় সেই ব্যবস্থা করা দরকার।” যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক সুমেশ রায় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে ২টোর সময় চলে যাই। তবে কর্মী কম থাকায় ও পরিকাঠামোর অভাবে পরিষেবা দিতে অসুবিধা হয়।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে না থাকা নিয়ে তার বক্তব্য, “ওই আবাসনের বেহাল অবস্থায় থাকার মতো পরিবেশ নেই। তাই দূরে নদিয়ার করিমপুরের বাড়ি থেকে আসি থাকি।”
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এহেন দশায় রোগীদের একমাত্র ভরসা কুড়ি কিলোমিটার দূরের ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল। আর সেই সুযোগে রমরমা বাড়ছে হাতুড়ে চিকিৎসকদের। এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওহাব বলেন, “সাপে কাটা থেকে বিষ খাওয়া সব রোগী দের চিকিৎসা হত এখানে। তবে এখন সেরকম কিছু ঘটলে ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল যাওয়া ছাড়া গতি নেই।” গড়াইমারির বাসিন্দা আকলিবা বিবি বলেন, “ডাক্তার বাবুরা কখন আসেন বোঝাই যায় না। তাই হাতুড়েই ভরসা আমাদের।” তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতির ব্যাপারে আশাবাদী গ্রামবাসীরা। ডোমকলের এসিএমওএইচ সচিন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উন্নয়নের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে জিৎপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ শেষের দিকে । এর পরেই গড়াইমারির কাজ শুরু হবে।” ডোমকলের বিএমওএইচ শুভরঞ্জন চন্দ বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসককে এলাকায় থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে দশ বেডের হাসপাতাল হয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হবে।”
|