নির্বাচনী বিধি ভেঙে দেড় বছর ধরে কলকাতা পুরসভার একটি ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাতেও মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। দীর্ঘ দিন উপ-নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখায় সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে। এ দিন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা দামের মৃত্যু হয়। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী আসনটি শূন্য হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ওই আসনটি শূন্য হওয়ার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে জানায়। নির্ধারিত সময়ে পুরসভার উপ-নির্বাচন না-হওয়ার দায় এ দিন নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য পুর-দফতরের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের স্পষ্ট কথা: ভোট করবে কমিশন। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দায়িত্ব পুর-দফতরের। কাউন্সিলরের মৃত্যুর কারণে আসনটি খালি হওয়ার ঘটনা যথাসময়ে নির্বাচন কমিশন এবং পুর-দফতরকে জানানোর দায়িত্ব পুরসভার। সেই দায়িত্ব পালনে কোনও খামতি হয়নি পুর-কর্তৃপক্ষের। প্রসঙ্গত এ দিন পুরকর্তারা জানান, মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিহির সাহা চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মারা গিয়েছেন। মিহিরবাবুর আসনটি শূন্য হওয়ার কথাও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুর-দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি জানান, কমিশনের তরফে একাধিক বার কলকাতার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচন করার জন্য রাজ্য পুর-দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে একাধিক বার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কমিশনের কথায় কোনও আমলই দেয়নি পুর-দফতর। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে আগাগোড়াই নিরুত্তর থেকেছেন পুর-দফতরের কর্তারা। এর পরেই ওই আইনজীবীর মন্তব্য, “ভোট না-করাটাই এই সরকারের এক রকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনের দাবিতে দায়ের করা জনস্বার্থের মামলার শুনানিতে আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, বছর দেড়েক ধরে জনপ্রতিনিধি-শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে মহানগরীর ওই এলাকা। কাউন্সিলর না-থাকায় বাসিন্দারা পুর-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাসিন্দাদের কাছে পুর-পরিষেবা পৌঁছনোর জন্য অবিলম্বে উপ-নির্বাচন করার আবেদন জানানো হয়েছে বারংবার। কিন্তু রাজ্য সরকার নির্বিকার। পুর-দফতরের তরফে কোনও সাড়াই মেলেনি। মামলার শুনানি শেষে সোমবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্য কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিয়ে অবশ্য এ দিন কোনও রকম বিতর্কে না-গিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “আদালতের রায় এখনও দেখিনি। তবে কোর্টের নির্দেশ শিরোধার্য। আদালতের রায় মেনে নিয়েই কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ করা হবে।” প্রসঙ্গত পুরমন্ত্রী জানান, কলকাতার পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের মৃত্যুর কারণে ওই আসনটিও শূন্য হয়েছে। মহানগরীর দু’টি ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনই একই দিনে করা হবে।
তবে বিধাননগর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড-সহ রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার আরও ২২টি শূন্য আসনের ভোটগ্রহণ কবে হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট জবাব এ দিন পুর-দফতরের তরফে মেলেনি।
এ দিন কলকাতা-সহ বিভিন্ন পুরসভার শূন্য আসনের উপ-নির্বাচন ঝুলে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোনও পুরসভায় উপ-নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সেখানে যাবতীয় উন্নয়নের কাজ সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখতে হয়।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপা্যায়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনের বিষয়টি দীর্ঘদিন মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনাই হয়নি। সম্প্রতি ঘটনাটি তাঁর নজরে আসে। নির্বাচনী বিধি মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরসভার উপ-নির্বাচন না-হওয়ায় ঘনিষ্ঠদের কাছে একই সঙ্গে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
|