‘অপহরণে’র আগে তাঁকে টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়েছিল বলে অভিযোগ তুললেন ভারতের প্রথম মহিলা জওয়ান শান্তি টিগ্গা। শান্তিদেবীর দাবি, গত ৯ এপ্রিল চালসা বাজারের কাছ থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। একটি নজরমিনারে বাঁধা অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর আরও দাবি, এতক্ষণ ডিউটি করার ক্লান্তিতে তিনি ‘অপহরণকারীদের’ প্রতিরোধ করতে পারেননি। সেনা জওয়ান হলেও বর্তমানে তিনি রেলে কর্মরত।
গত শনিবার রাতে উদ্ধারের পর শান্তি টিগ্গাকে আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার সকালে তাঁকে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এডিআরএম দেখতে যান। তখনই ওই মহিলা জওয়ান ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করানোর অভিযোগ তোলেন। এডিআরএম বলেন, “শান্তি টিগ্গার শরীরে ব্যাথা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। একটানা ডিউটি করানোর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।” শান্তির ভাই জয়প্রকাশ টিগ্গার অভিযোগ, দিদিকে টানা ডিউটি করিয়ে রেল মানবাধিকার ভঙ্গ করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রক, মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশনে যাচ্ছি।
রেলের কর্মী সংগঠন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের আলিপুরদুয়ারের সম্পাদক বিজন দেব রায় জানান, অপহরণের বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। টানা ডিউটি তো দূরের কথা রাতে মহিলা কর্মী দিয়ে কোনও গেটে কাজ করানো যায় না। আমরা রেলের আধিকারিকদের কাছে জানতে চাইছি। এ দিন হাসপাতালে শান্তির সঙ্গে কথা বলেন রেল ও রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা।
শান্তিদেবী জানান, ৮ মে ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি চালসা ষ্টেশনে ডিউটি করি। পরে সন্ধ্যে ৬টা থেকে এস কে-১৭৩ গেটে ডিউটি দেওয়া হয়। ৯ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত গেটে ডিউটি করার অন্য কেউ না আসায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। পরে চালসা স্টেশনে গেলে সেখানে আর এক কর্মী না আসায় দুই ঘণ্টা ডিউটি করানো হয়। রাতে এক সহকর্মীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাকায় বাজারে যাচ্ছিলাম উপহার কিনতে। সেই সময় গাড়ি নিয়ে এসে দু’জন চোখ, মুখে বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। পরে দড়ি বেঁধে ফেলে রাখা হয়। শান্তিদেবীর দাবি, “টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করায় শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকায় প্রতিরোধ করতে পারিনি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে তিনি একটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। এ দিন শান্তিদেবী বলেন, “সেনা বাহিনীর অনেকেই আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন। সেই হিসাবে আবেদন করি। এখনও পাইনি।” তবে কেন তাঁর আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োজন তা সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। শান্তি টিগ্গার কথায়, তাঁকে ৩১ নং জাতীয় সড়ক ধরেই মহাবাড়ি দেওপানি বস্তিতে আনা হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা কেন এই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহার করল তা পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি তাঁকে যেখানে বাঁধা হয়েছিল সেটি দেওপানি গ্রামের খুব কাছে। অথচ দুই কিলোমিটার দূরেই চাপড়ামারির ঘন জঙ্গল ও মূর্তি নদী রয়েছে। সেখানেও অনেক নজরমিনার রয়েছে। তাই বসতি এলাকার কাছে তাঁকে কেন রাখা হল তা পরিস্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে।
|