শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কাওয়াখালি প্রকল্প
জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ বিলিতে নয়ছয়ের আশঙ্কা
শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কাওয়াখালি-পোড়াঝাড়ে ফিল্ম সিটি-সহ নানা প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ বিলির নামে অন্তত ৩ কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে আশঙ্কা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ)।
প্রাথমিক তদন্তের পরে এসজেডিএ-র পুনর্বাসন কমিটি নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের একাংশের জমির মালিকানা কিংবা দখল সংক্রান্ত নথিপত্র নেই। তবুও অফিসার-কর্মীদের একাংশের যোগসাজশে তাঁদের জমিদাতা হিসেবে সরকারি টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে কমিটির সন্দেহ। যা জানার পরে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বিশদে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, “ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি টাকার অপচয় বরদাস্ত করা হবে না।”
বিধি ভেঙে ‘পাইয়ে দেওয়া’ টাকা ফেরত পেতেও কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে এসজেডিএ। সংস্থার পরিচালন সমিতির একাধিক সদস্য জানান, যে সব অফিসার-সমীক্ষক-কর্মী ওই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।
এই সেই কাওয়াখালি প্রকল্প এলাকা। —নিজস্ব চিত্র
এসজেডিএ-র বর্তমান মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী সম্প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি মন্তব্য করতে চাননি। ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই বিপুল অঙ্কের টাকা যে সময়ে বিলি হয়, তখন যিনি মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ছিলেন, সেই গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “এসজেডিএ-র দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ না চাইলে ওই সংস্থার কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।” তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, যে সব অনিয়মের প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে নতুন চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
বাম আমলে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কাওয়াখালি ও পোড়াঝাড়দু’টি লাগোয়া এলাকায় ওই প্রকল্পের জন্য ৩০২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখনই জমিদাতাদের চিহ্নিত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই এলাকায় যাঁদের নিজেদের জমি রয়েছে, যাঁরা বর্গায় চাষ করতেন কিংবা সরকারি জমি দীর্ঘদিন ভোগদখল করেছেন তাঁরা সকলেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী বলে এসজেডিএ সিদ্ধান্ত নেয়। এসজেডিএ ভূমি সংস্কার ও ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের সাহায্য নিয়ে সমীক্ষা করে। সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রায় ১,২০০ জনের নামের তালিকা তৈরি হয়। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য তখন ছিলেন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান। তাঁর বক্তব্য, “জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। আমাদের সময়ে একাধিক কমিটির সাহায্যে প্রাপক-তালিকা যাচাই করে তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এখন যা হয়েছে, তার দায় শাসক দলকে নিতে হবে।”
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান হন শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু। ওই সময়ে শিলিগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে এসে কাওয়াখালি-পোড়াঝাড়ে ফাঁকা জমি আছে শুনে সেখানে ফিল্ম সিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্রুত ওই এলাকার ৮৪ একর জমিকে ঘিরে ফিল্ম সিটি-র জন্য চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকা সামনে রেখে ওই এলাকায় বকেয়া ক্ষতিপূরণ বিলিতে জোর দেওয়া হয়। শুরু হয় পাঁচিল দেওয়ার কাজ। তখন আপত্তি করে এলাকার বাসিন্দা ও চাষিদের নিয়ে গঠিত একাধিক কমিটি। এসজেডিএ-র কর্তারা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে পাঁচিল দেওয়ার কাজ করেন। গত ডিসেম্বরে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার চেক বিলি হয়।
এপ্রিলের গোড়ায় ওই চেক বিলির বিষয়টি বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হলে এসজেডিএ-র তিন সদস্য চন্দন ভৌমিক, জ্যোৎস্না অগ্রবাল ও রঞ্জন শীলশর্মা ক্ষতিপূরণের তালিকার বেশ কিছু নামোল্লেখ করে অর্ধেকেরও বেশি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তার পরেই ব্যাপারটা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তদন্ত রিপোর্ট কবে জমা পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কাওয়াখালি-পোড়াঝাড় ভূমিরক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক যুগলকিশোর সরকার বলেন, “প্রকৃত প্রাপকেরা যাতে টাকা পান, সেটা এসজেডিএ-কে নিশ্চিত করতে হবে। কারও যোগসাজশে ভুয়ো কেউ টাকা পেয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এখন তদন্ত রিপোর্টে ক’জন ভুয়ো জমিদাতা চিহ্নিত হন এবং কাদের যোগসাজশে তাঁরা টাকা পেয়েছেন বলে প্রকাশ্যে আসে তা নিয়েই এসজেডিএ-র অন্দরে চলছে জল্পনা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.