|
|
|
|
চলছে নিরন্তর নজরদারি |
শক্তি না-বাড়লেও উদ্বেগে রাখছে মহাসেন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মহাসেন-এর শক্তি রবিবার আর বাড়েনি। বরং দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, তা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদিও এখনও তার কেন্দ্রে বায়ুপ্রবাহের যা গতি, তাতে ওই ঝড় উপকূলে আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা যথেষ্ট বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
তবে ভারত, বাংলাদেশ নাকি মায়ানমার কোন দেশের উপকূলে মহাসেন আছড়ে পড়বে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সাধারণত কোনও ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হলে তার গতিবেগ বেড়ে যায়। তাই ঠিক কবে নাগাদ মহাসেন উপকূলে আঘাত করতে পারে, তার ইঙ্গিত পেতে আপাতত উপগ্রহ-চিত্র থেকে
চোখ সরাতে পারছেন না মৌসম ভবনের আবহবিদেরা।
ঘটনা হল, মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সাধারণত প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না। যদি হয়, তা হলে সেই ‘ব্যতিক্রমী’ ঝড় কিছুটা অস্বাভাবিক ব্যবহার করে। তার গতি-প্রকৃতির আগাম আঁচ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। যেমন হয়েছিল ২০০৯-এ, আয়লার ক্ষেত্রে। সে বার ২৫ মে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগের ওই প্রবল ঘূর্ণিঝড় প্রায় আকস্মিক ভাবে আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনের উপকূলে। ২০০৪-এও একই ঘটনা। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, সে বছরের ১৭ মে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল (তখনও ঝড়ের নামকরণের রেওয়াজ চালু হয়নি), যা শেষমেশ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ঘা মারে মায়ানমার উপকূলে। তার হাবভাবও আগে আঁচ করা যায়নি।
ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সেই মে মাসেই উদ্ভব মহাসেনের। (আবহবিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর-নভেম্বর এবং মে-জুন মাসেই বঙ্গোপসাগরে বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়) কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রক তাই অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সতর্কতায় ঢিলে দিচ্ছে না। মৌসম ভবনের নিরন্তর নজরদারি চলছে মহাসেনের গতিবিধির উপরে। তার প্রতি মুহূর্তের অবস্থান, অভিমুখ, ও গতিবেগ নির্ধারণ করে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরকে। এ দিন বিকেলে মহাসেনের অবস্থান ছিল চেন্নাইয়ের আটশো কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব-অঞ্চল চিহ্নিত করতে শঙ্কু আকৃতির একটি কাল্পনিক এলাকা ছকে নেন আবহবিদেরা। মহাসেনের ক্ষেত্রে তার মধ্যে পড়ছে ভারতের পূর্ব উপকূল। তবে দিল্লির আশ্বাস, এখনই সেখানে আতঙ্কের কিছু নেই। “তেমন আভাস পেলে আমরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোকে হুঁশিয়ারি-বার্তা পাঠাতে শুরু করব। এখনও সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।” এ দিন বলেন মৌসম ভবনের এক আবহবিদ।
আবহবিদদের একাংশের প্রাথমিক অনুমান, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ উত্তর-পশ্চিমে সরে কাল, বুধবার নাগাদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কিংবা মায়ানমার উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকবে। পাশাপাশি মহা বিপর্যয়ের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কেটেছে বলে মনে করছেন ওঁরা। বস্তুত উৎপত্তির গোড়ায় মহাসেন যে ভাবে নিজের কেন্দ্রে শক্তি পুঞ্জীভূত করছিল, তাতে মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত সে আয়লার মতো বিধ্বংসী একটা চেহারা নেবে। এ দিন সকালে আপাত ভাবে বোঝা যায়, যতটা ভাবা হচ্ছিল, ততটা শক্তিশালী সে হয়ে উঠছে না। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, চট্টগ্রাম-মায়ানমার উপকূলে আঘাত করার সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিমি পর্যন্ত উঠতে পারে।
এ সবই অবশ্য পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুমান। মহাসেনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে মৌসম ভবন এখনই চূড়ান্ত সরকারি পূর্বাভাস দিতে নারাজ। ব্যাখ্যা হিসেবে আবহবিদদের বক্তব্য: মহাসেন যত ক্ষণ সমুদ্রের উপরে অবস্থান করবে, তত ক্ষণ তার শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েই যায়।
উপরন্তু উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোতে এগোতে তা কোথাও থেমে গেলে বিপদ। কারণ সে ক্ষেত্রেও ঝড়ের শক্তি বাড়তে পারে, বদলাতে পারে অভিমুখ।
কী হতে পারে, না পারে, তা বুঝে উঠতে এখন চব্বিশ ঘণ্টাই উপগ্রহ-চিত্রে নজর আটকে মৌসম ভবনের। |
পুরনো খবর: এ বার হাজির মহাসেন, দুশ্চিন্তায় আবহবিদেরা |
|
|
|
|
|