ইয়েদুরাপ্পার অভাব নয় হার দুর্নীতিতেই, ব্লগে পাল্টা আডবাণী
র্নাটকের হারের জন্য যাঁরা তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন, দলের সেই নেতাদের আজ জবাব দিলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
অরুণ জেটলির মতো কর্নাটকের অনেকেই মনে করেন, রাজ্য রাজনীতিতে অনন্ত কুমার বরাবরই ইয়েদুরাপ্পা বিরোধী। আর সেই অনন্ত কুমারের পরামর্শেই আডবাণীর মতো নেতারা গোড়া থেকে ইয়েদুরাপ্পার বিরোধিতা করে এসেছেন। যার ফলে দল ছাড়তে হয়েছে ইয়েদুরাপ্পাকে। সেই ইয়েদুরাপ্পা, যাঁর লিঙ্গায়েত ভোটের জোরেই পাঁচ বছর আগে দক্ষিণের প্রথম কোনও রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। আর এ বার সেই ইয়েদুরাপ্পাই বিজেপির ভোটে থাবা বসিয়ে দলকে ১১০ থেকে নামিয়ে ৪০-এ নিয়ে এসেছেন। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দলের একাংশ যখন ইয়েদুরাপ্পাকে ফের বিজেপিতে ফেরাতে সক্রিয় হচ্ছেন, তখনও আডবাণীর মতো নেতারাই বাদ সাধছেন। বিজেপি সূত্রের মতে, ভোট অঙ্কের কথা মাথায় রেখে খোদ নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহের মতো নেতারা যখন ইয়েদুরাপ্পার প্রতি সহমর্মী, তখন আডবাণীর অনড় অবস্থানের জন্যই দলকে খেসারত দিতে হল।
কর্নাটকের ফল প্রকাশের চার দিন পর যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিতে আজ প্রথম মুখ খুললেন আডবাণী। নিজের ব্লগে নাম না করে একহাত নিলেন দলের সেই নেতাদের, যাঁরা তাঁকে লাগাতার সমালোচনা করে আসছেন। ব্লগের শুরুতেই আডবাণী লিখেছেন, কর্নাটকের হারের জন্য তিনি দুঃখিত। কিন্তু বিস্মিত নন। বরং দল জিতলে বিস্মিত হতেন। আডবাণীর মতে, যখনই ইয়েদুরাপ্পা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন, তখনই কড়া পদক্ষেপ করলে এই পরিণতি হত না। ভোটাররা যখন দেখেন, জাতীয় স্তরের নেতারা অনৈতিক কাজে মদত দিচ্ছেন, তখন তাঁরা রুষ্ট হন। কর্নাটকের বিষয়টি যে ছোটোখাটো বিষয় ছিল না, ভোটেই তার প্রমাণ মিলেছে।
ইয়েদুরাপ্পার বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা বোঝাতে আডবাণী অতীতের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন। তিনি জানান, জনসঙ্ঘের সময় রাজস্থানে কংগ্রেস জাগিরদারি ব্যবস্থা বিলোপ করতে একটি বিল আনছিল। অথচ বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও তা সমর্থন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ৮ জন নির্বাচিত বিধায়কই জাগিরদার ছিলেন। তার মধ্যে ৬ জন এই বিলের বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে ছ’জনকে বহিষ্কার করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে দু’জন বিলের সমর্থন করেছিলেন, তার মধ্যে এক জন হলেন প্রয়াত ভৈঁরো সিংহ শেখাওয়াত। যিনি পরে তিন বার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি উপরাষ্ট্রপতিও হন। আডবাণীর মতে, জনসঙ্ঘ জন্মলগ্ন থেকে যে সাহস দেখাতে পেরেছিল, আজ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে কেন সেই সাহস দেখাতে পারবে না দল? কিন্তু বিজেপিতে ভিন্নমত পোষণকারী নেতাদের বক্তব্য, দুর্নীতি নয়, জাত-পাতের সমীকরণের খেসারতই দিতে হয়েছে বিজেপিকে। লিঙ্গায়েত ভোটে বিভাজন না হলে কর্নাটকে এই শোচনীয় ভরাডুবি হত না। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারা সেই বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। লোকসভার আগে ইয়েদুরাপ্পাকে যদি ফিরিয়ে আনা না হয়, তা হলে কোনও অবস্থাতেই কর্নাটক থেকে পাঁচটির বেশি আসনও পাওয়া যাবে না। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটক থেকেই সব থেকে বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু দলে আডবাণী শিবিরের নেতাদের মতে, বিজেপির ভোটাররা সব সময়ই খুব সংবেদনশীল হন। নিতিন গডকড়ী সভাপতি থাকার সময় উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে যে ভাবে বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে নিয়ে এসেছিলেন, ভোটে মানুষ তার মোক্ষম জবাব দিয়েছেন। কর্নাটকেও মানুষ ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ছিলেন, যে কারণে কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। খোদ সঙ্ঘ নেতৃত্বও এখন সেই সারসত্যটি বুঝতে পারছেন। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে আডবাণী বলেন, ইয়েদুরাপ্পাকে বিজেপি কখনওই ছুঁড়ে ফেলে দেয়নি। বরং তিনি নিজেই দল ছেড়ে গিয়েছেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, আডবাণী মনে করেন দল যদি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রাখতে পারে, তা হলে জনতাও তাকে আলিঙ্গন করবে। এই কথা দল ও সঙ্ঘের নানান মঞ্চে বারবার বলে এসেছেন। আজ তিনি এক ঢিলে দুই পাখিও মারার চেষ্টা করেছেন। এক দিকে যেমন দলের ভুল নীতি নিয়ে তাঁর সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে দলকে কোন পথে এগোতে হবে, সেই দিশাও দেখিয়ে দিয়েছেন।
আডবাণী ব্লগে লিখেছেন, “কর্নাটকের ফল শুধু বিজেপিই নয়, কংগ্রেসেরও শিক্ষা নেওয়ার বিষয়। দুই দলের শিক্ষণীয় বিষয় হল, সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। যদি দুর্নীতির বিষয়টি বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে পারে, তা হলে সেটি দিল্লিতে কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবে না কেন?” কর্নাটকের ফল বেরোনোর আগে পর্যন্ত কয়লা কেলেঙ্কারি ও রেল দুর্নীতি নিয়ে কংগ্রেস কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জয়ের পরেও কংগ্রেসের বোধোদয় হয়েছে যে দুর্নীতির বিষয় ভোটে কাজ করে। সে কারণেই তারা দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। অতীতে সনিয়া গাঁধী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উপেক্ষা করে নির্বাচনে ফল পেয়েছেন। দিল্লিতে দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগকে উপেক্ষা করতে পারেননি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.