সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার অফিসে হানা, কর্মী-এজেন্টদের ধরপাকড়, বিক্ষোভ, রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত।
শুক্রবার দুর্গাপুর থেকে সারদা গোষ্ঠীর তিন এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার দুর্গাপুর আদালতে তাঁদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। হুগলির চন্দননগরে সারদার অফিসে অভিযান চালিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স বাজেয়াপ্ত করে অফিস সিল করে পুলিশ। বিকেলে জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ায় সংস্থার অফিসে হানা দিয়ে চারটি মোটরবাইক, তিনটি ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। |
এ দিনই লগ্নি সংস্থা অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কণর্ধার প্রসেনজিৎ মজুমদারকে ব্যারাকপুর জেল থেকে ৯ দিনের জন্য হেফাজতে নেয় বর্ধমানের কাটোয়া থানার পুলিশ। এক এজেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। এটিএম গ্রুপের ডিরেক্টর প্রদীপ দাসকে নিয়ে মেদিনীপুরে তল্লাশি চালায় ঝাড়গ্রাম পুলিশের দল। তখন কেরানিতলায় ওই সংস্থার অফিসে আমানতকারীরা বিক্ষোভ দেখান।
কৃষ্ণনগরে আইএনটিটিইউসি-র নামে ব্যানার টাঙিয়ে রোজ ভ্যালীর প্রচার চালানোর অভিযোগে চার এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস নামে স্থানীয় চক-দিকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্যও রয়েছেন। কৃষ্ণনগর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি, “সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই আমাদের শ্রমিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সুমিত বিশ্বাসের পাল্টা দাবি, “তৃণমূলের লোক না থাকলে আইএনটিটিইউসি-র পতাকা ব্যবহার করত না।”
|
কবীর রায় |
এ দিন দুপুরেই ‘গ্রেট ওভারসিজ কমোডিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি লগ্নি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সমরেশ মণ্ডলকে বারাসত আদালতে পেশ করার সময়ে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, তিন মাস আগে মেয়াদ পূর্ণ হওয়া আমানতের টাকা পাচ্ছেন না। নির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও প্রতাপচন্দ্র মণ্ডল এবং রমেশ হাওলাদার নামে আরও দুই কর্ণধার এখনও অধরা। সংস্থাটি শুধু উত্তর ২৪ পরগনা তুলেছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বাগুইআটির ইস্ট মল রোডে বহুতল আবাসনের নীচে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল কবীর রায় (৩৭) নামে এক অর্থলগ্নি সংস্থার মালিকের দেহ। বাগুইআটিরই দেশবন্ধুনগরে তাঁর অফিস ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন কারণে সংস্থার অবস্থা খারাপ হয়। সারদা কাণ্ডের ধাক্কায় চাপ বাড়ে। ঘটনার দিন দুপুরেও কিছু কর্মী ও এজেন্ট তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরেই আবাসনের ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অনুমান পুলিশের।
শুক্রবারই বর্ধমানে গিয়ে প্রাক্তন বাম সরকারের সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বর্ধমান শহরের টাউনহলে সভা করে প্রতিবাদ জানায় বামফ্রন্ট। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল নানা ভাবে লগ্নি সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। |
ঘটনা যা-ই হোক, তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা আপাতত লগ্নি সংস্থার থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখতে চাইছেন। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, খোঁজখবর না নিয়ে তিনি কোনও সংস্থার অনুষ্ঠানে যাবেন না। মধ্যমগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে এ দিন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বলেন, “দলের নেতা-কর্মীদের ছাড়া আর কারও সামাজিক অনুষ্ঠানে যাব না। সে ক্ষেত্রেও আগে ভাল করে খোঁজ নেব।” এমনকী দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আগেও সতর্ক থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশের কাছে আগে ভাল করে জেনে নেব, সভামঞ্চে কারা থাকছেন।” |