হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য যে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে এ দিন তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। এই ক্ষেত্রে কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি ছিল এক সুর। সকলেরই বক্তব্য, সারদা কাণ্ডের পরে এই ভাবে আইনি লড়াই জারি রেখে রাজ্য আসলে পঞ্চায়েত ভোটই এড়াতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথার মধ্যে কোনও মিল নেই বলেও অভিযোগ করেছে তারা। তিন দলেরই দাবি, হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে দ্রুত ভোটে যাক সরকার। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সোমবার রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে গেলে তাঁরাও রাজ্যপালের কাছে যাবেন দ্রুত ভোট করানোর দাবি নিয়ে।
এই সমালোচনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সরকার কিন্তু গত শীতেই ভোট করতে চেয়েছিল। সেপ্টেম্বরে অবসর নেওয়ার আগে তৎকালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ এই প্রস্তাব নিয়ে একাধিকবার কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তার পরে সমরবাবুর জায়গায় এসে সঞ্জয় মিত্রও একই কাজ করেছেন। কিন্তু তার পরেও কমিশনের দিক থেকে সাড়া মেলেনি। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, তা হলে এখন কেন বলা হচ্ছে যে তাঁর সরকার ভোট করা নিয়ে টালবাহানা করেছে!
বিরোধীরা অবশ্য হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের পর দিন সরাসরি রাজ্য সরকারকেই নিশানা করেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব এ দিন অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য সরকারই অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার বর্ধমানে বলেছেন, ঠিক সময়েই পঞ্চায়েত ভোট হবে। অথচ পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলছেন, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন। কার কথা ঠিক?” দ্রুত পঞ্চায়েত ভোটের দাবিতে বামেরা মামলার অংশীদার হবে কি না জানতে চাইলে রবীনবাবু বলেন, “আমরা আগেই মামলার অংশীদার হতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি।” মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঠিক সময়ে ভোট হবে’ বলা নিয়ে প্রদীপবাবুও বলেছেন, “মুখে বলছেন ঠিক সময়ে হবে। ঠিক সময়টা কবে আসবে? ডিভিশন বেঞ্চে গেলে তো জুন পেরিয়ে যাবে। পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তা মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তা হলে অবান্তর, অর্থহীন কথা বলছেন কেন?” রাজ্য এসডিও, বিডিওদের মাধ্যমে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালানোর চেষ্টা করছে বলে রবীনবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। তাই ভোট পিছিয়ে দেওয়ার বাহানা খুঁজছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে পুরভোট, এমনকী পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনও রাজ্য করতে চাইছে না। শিলিগুড়িতে এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের পর রাজ্যের উচ্চতর বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।” তাঁর পরামর্শ, আদালতের রায় মানুক রাজ্য।
এ দিন হাজরা মোড়ের সভা থেকে প্রদীপবাবু সরাসরি আক্রমণ করেন মমতাকে। বলেন, “শকুনের শাপে গরু মরে না। তৃণমূল নেত্রীর অভিশাপেও কংগ্রেসকে এক ইঞ্চিও সরানো যাবে না।” পবন বনশল এবং অশ্বিনী কুমারের ইস্তফার প্রসঙ্গ টেনে প্রদীপবাবু এ দিন পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “কংগ্রেস দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেনি। দুই মন্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে ছাঁটাই করেছে। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে দলের জড়িত নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রী কেন নেননি?”
অবশ্য এ দিন চাকদহে এক সভায় তৃণমূল নেতা মুকুল রায় দাবি করেন, লগ্নি সংস্থার দুর্নীতির সঙ্গে তিনি বা দলের অন্য কেউ জড়িত থাকলে দলনেত্রী তাঁদের কাউকেই রেয়াত করবেন না। তিনি বলেন, “তিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে লোকসভা নির্বাচন হবে। তার পরে কেন্দ্রের সরকার গঠনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নির্ণায়ক শক্তি হবেন।”
এই কথার প্রেক্ষিতে আবার মমতাকে কটাক্ষ করেছেন প্রদীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আপনি (মমতা) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ওই স্বপ্ন নিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমোন। কংগ্রেসকে আপনি নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না।” হাজরার সভায় কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কটাক্ষ, “কোনও আঞ্চলিক দল আগামী দিনে কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবে না। কংগ্রেসই কেন্দ্রে নেতৃত্ব দেবে।” কংগ্রেস কর্মীদের উপর শাসক দলের হামলা বন্ধ না হলে বাংলা বন্ধ ডাকারও হুঁশিয়ারি দেন প্রদীপবাবু। |