ধাপে ধাপে উঠে গিয়েছে চারটে তলা। নিঝুম কাঠফাটা দুপুরে বসে ঢুলছে সিকিউরিটি গার্ড। চারপাশটা কেমন যেন জনশূন্য, হাত তিনেক দূরে তিন জন স্থানীয় আপনমনে কী যেন সব খুটখাট করছেন। লাল-হলুদ বাড়িটার নাম এক ঝলক পড়া গেল।
‘শৌর্য’।
যদিও ক্রিকেটপাগল দেশের সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল ক্রিকেট আইকনের বাসভূমি ঘিরে যে শৌর্যের ছাপ থাকা উচিত, তা নেই। দেখে কেউ বিশ্বাসও করবে না যে, এই বাড়িতে গত মার্চেও ঘুরে গিয়েছিলেন তিনি। দেখলে কে বলবে, তিনি এলে এই বাড়ির গেট থেকে অবিরাম ঢুকতে-বেরোতে দেখা যায় তাঁর সাধের ‘হামার’-কে। বেহালার বীরেন রায় রোডের লাল রঙের প্রাসাদপম বাড়ির সামনে যে জটলাটা আজও দুপুরে তৈরি হয়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় খেলা ছেড়ে দেওয়ার পাঁচ বছর পরেও, সে সব কোথায়?
অথচ এখানেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থাকেন! এই বাড়িতেই! |
প্রায় পা প্লে অফে। টিম বাসে খোশমেজাজে জাহির-কোহলি। |
“কী বললেন? কেকেআরের ম্যাচ? নাহ্, সিএসকে থাকলে তবু একটা ব্যাপার ছিল,” বেশ বিরক্ত শোনায় এমএসডি-র বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর গলা।
বক্তব্য অতি সংক্ষিপ্ত, সামান্য। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে গোটা শহরের মননের নির্যাসটাই যেন এতে ধরা পড়ে। বিরসা মুণ্ডা এয়ারপোর্ট থেকে নতুন গন্ধে মোড়া জেএসসিএ স্টেডিয়াম ঘণ্টাখানেকের রাস্তায় তো দু’টোর বেশি কেকেআরের হোর্ডিং চোখে পড়ল না। বরং শহরে আইপিএল ম্যাচ আনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এর চেয়ে বেশি পোস্টার পড়েছে ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট অমিতাভ চৌধুরির নামে! ধোনিদের পারিবারিক বন্ধু, ঝাড়খণ্ডেরই প্রাক্তন ক্রিকেটার বলদেব সিংহ গোঁসাইয়ের সঙ্গে কথা বলুন, উত্তর আসবে, “রাঁচির লোক, আমরা চেয়েছিলাম ধোনির জন্য গলা ফাটাতে। নিজের শহরের মাঠে ওর একটা দুর্ধর্ষ আইপিএল ইনিংস দেখতে।” শুনলে মনে হবে, কেকেআর নয়, সিএসকের হোম হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্যই যেন মুখিয়ে বসে গোটা শহর। আর শনিবার বিকেলে প্রায় ফাঁকা জেএসসিএ মাঠে কেকেআর প্র্যাক্টিস দেখে মনে হতে বাধ্য, আনন্দবাজার-কে বলদেব খুব ভুল কিছু বলেননি।
কেকেআরকেও তো অদ্ভুত, অভূতপূর্ব একটা বিবৃতি দিতে হল।
সন্ধে সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে। নাইটদের প্র্যাক্টিস ততক্ষণে শেষ। হঠাৎই কেকেআরের পক্ষ থেকে একটা বিবৃতি হাজির। বক্তব্য এ রকম: ‘রাঁচিতেও আমরা ইডেনের মতো সমর্থন আশা করছি!’ |
নাইটদের প্র্যাক্টিস চলছে। রাঁচিতে। |
অর্থাৎ, রাঁচি স্টেডিয়ামে কতটা সমর্থন পাওয়া যাবে, সন্দেহ আছে। নইলে সমর্থন আশা করে বিবৃতি আসছে, সচরাচর এমন ঘটতে দেখা যায় না। নাইট অধিনায়ক এক বার মনে করালেন বটে যে তাঁর টিম এখন ধোনির শহরেরও হোম টিম। কিন্তু তত্ত্বটা নিজেও কতটা বিশ্বাস করেন, বলা কঠিন। না হলে আর কেন বলবেন, “ইডেনের মতো এখানকার দর্শকও আমাদের সাপোর্ট করবে কি না জানি না। এখানে তো এই প্রথম আইপিএল ম্যাচ খেলব।” না হলে আর জনৈক স্থানীয় সাংবাদিক কেন ব্যঙ্গের সুরে হোম টিমের ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করবেন, আচ্ছা আপনি মাঠে হাসেন না কেন? যে প্রশ্ন শুনে থতমত ভাবটা সামলে নিয়ে মুচকি হেসে গম্ভীর বলবেন, “যে দিন লোকে আমার হাসি দেখতে মাঠে আসবেন, সে দিন নিশ্চয়ই হাসব!”
হোম অ্যাডভান্টেজে যে তাঁর কাছে বিশেষ পাত্তা পায় না, আইপিএলের তিন বছরে অনেক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন কেকেআর ক্যাপ্টেন। তবু এ দিন রাঁচির পিচের বাউন্স দেখে একটু হলেও যে স্পিন-স্বর্গ ইডেনের জন্য তাঁর মন কেমন করেনি, বাজি রেখে বলা যাবে না। গম্ভীর যে এখনও প্লে-অফের স্বপ্ন ছাড়েননি! বরং তিনি মনে করেন, পরপর তিনটে ম্যাচ জিতলে এখনও নাইটদের ঘোড়া শেষ চারের রাস্তায় ছুটতে পারে। যার জন্য ক্রিস গেইলের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচটা তাঁর কাছে স্রেফ সম্মানরক্ষার লড়াই নয়, দেখা দেয় ‘মাস্ট-উইন’ ম্যাচ হিসেবে।
আত্মপক্ষ সমর্থনে যে কথা কেকেআর অধিনায়ক বলতেই পারেন। কিন্তু বাস্তব বলছে, রবিবার জিতলেও নাইটদের প্লে-অফ অঙ্ক যেমন জটিল আছে, তেমনই থাকবে। আর রাঁচিতে গম্ভীরদের লড়াই শুধু গেইল-কোহলিদের বিরুদ্ধে, কে বলল? আরও এক প্রতিপক্ষ না থেকেও আছেন, অদৃশ্য ভাবে।
এই ছোট্ট শহরের চিরন্তন নাম। তিনটে মাত্র অক্ষর। এমএসডি!
|
কোহলিদের পিছনে এখনও স্টেইনরা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ধোনিরা নিশ্চিন্তে ছিলেন আগেই। সচিন তেন্ডুলকররা শনিবার জিতে শেষ চারে প্রায় নিশ্চিত। রাহুল দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্যালসও তাই। চতুর্থ দল হিসেবে গেইলদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ে যাচ্ছে ডেল স্টেইনদের সানরাইজার্স। আর গম্ভীরদের কাজ কঠিন হয়ে যাচ্ছে ততটাই। শনিবার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে ৩০ রানে হারিয়ে কোহলিদের মতো সানরাইজার্সও ১৩ ম্যাচে ১৬ পয়েন্টে। বাকি তিন ম্যাচে স্টেইনদের সামনে মুম্বই, রাজস্থান আর কলকাতা। কোহলিদের বাকি তিন ম্যাচে লড়াই কলকাতা, পঞ্জাব ও চেন্নাইর সঙ্গে। শেষ ল্যাপের লড়াইয়ে শুধু জিতলে হবে না মাথায় রাখতে হবে রান রেটও। অবশ্য শনিবারের মতো বাকি তিন ম্যাচে সানরাইজার্স দাপট দেখাতে পারলে পাল্লা ঝুঁকে থাকতে পারে তাঁদের দিকেই। প্রথমে ব্যাট করে পার্থিব পটেলের ৪৭ বলে ৬১ রানের সুবাদে ১৫০-৭ করে সানরাইজার্স। জবাবে ডারেন স্যামির দাপটে (৪-২২) ১২০-৯ তে শেষ কিংস।
|