সময়, প্রজন্ম ও ফ্যাশন পাল্টাতে থাকলেও এই ব্যাপারগুলো চিরকাল একই রকম থেকে যায়।
ভেবেই দেখুন, এমন কিছু জিনিস আপনার জীবনে আছে, বদলে যাওয়া দিনগুলো যার ওপর কখনও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। আগেও যেমন স্বমহিমায় ছিল, এখনও তেমনই। আমার যেমন মনে পড়ছে রে ব্যান-এর অ্যাভিয়েটর সানগ্লাস, ব্লু ডেনিম ও সাদা শার্টের কম্বিনেশনের কথা। যে কোনও দিন, যে কোনও জায়গায় এবং যে কোনও অনুষ্ঠানে আমি এই কম্বিনেশনে হাজির হয়ে যেতে পারি। ভাবার কোনও দরকারই হয় না। দশ বছর আগেও এবং এখনও। বোধহয় টম ক্রুজের ‘টপ গান’ দেখার পরই অ্যাভিয়েটরের ‘দিওয়ানা’ হয়ে যাই। আর সাদা শার্ট-নীল জিনসের মতো ‘মোস্ট রিলায়েবল কম্বো’ আর আছে বলে মনেই হয় না আমার।
ক্রিকেটেও কিন্তু এমন কালজয়ী জিনিস রয়েছে। ক্রিকেট পাল্টে গেলে কী হবে, এগুলো চিরকালই ছিল, আছে, থাকবেও। স্কোয়ার ড্রাইভের কথাই ধরুন না। এই শটের মধ্যে এমন একটা দৃষ্টিনন্দন ব্যাপার আছে, এমন অপরূপ ভঙ্গিমা ও শিল্প আছে যে, এর প্রেমে না পড়ে উপায় নেই। নাতাশাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমি বেশ রোম্যান্টিক, তবে কখনও হাঁটু গেড়ে বসে ওকে বলিনি, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?” এক হাঁটুর ওপর ভর করে একটা নিখুঁত স্কোয়ার ড্রাইভ করা আমাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে। সে দিন পুণের বিরুদ্ধে ম্যাচে এমনই একটা স্কোয়ার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে বেশ তৃপ্তি পেয়েছি বলেই প্রসঙ্গটা তুললাম। পয়েন্ট ও কভার পয়েন্টের মধ্যে ছোট্ট ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে যখন বলটা বাউন্ডারির বাইরে চলে গেল, বিশ্বাস করুন, তখন আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু কী করব, তখন আমার সামনে ম্যাচ জেতার তাগিদ। |
নাতাশাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমি বেশ রোম্যান্টিক, তবে কখনও হাঁটু গেড়ে বসে ওকে বলিনি, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?” |
|
আর একটা শট আছে। এটা আবার আমার বেশি প্রিয় এবং এটাও কখনও পুরনো হবে না। স্টেপ আউট করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বল সোজা মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলা। বলের ওপর ব্যাটের এই আধিপত্যের চেয়ে রোম্যান্টিক মুহূর্ত একজন ব্যাটসম্যানের কাছে আর কী হতে পারে? এই রোম্যান্সের সঙ্গে একমাত্র আমার কালো ইয়ামাহা আরএক্স১০০-র প্রতি ভালবাসার তুলনা করা যেতে পারে। সে আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের প্রেম। তখন এই বাইকের জন্য আমাদের বন্ধুরা পাগল। কলেজে যে কালো ইয়ামাহা আনতে পারবে, সে তার পছন্দের বান্ধবীকে পিছনে বসাতে পারবেই, এমনই ব্যাপার ছিল তখন। আপনি হয়তো এ বার আমার সম্পর্কে কিছু ভাবছেন। আমার কিন্তু সেই বাইক ছিল না। দুঃখিত।
শুরুতে পার্ট টাইম লেগ স্পিনারও ছিলাম। বলকে ডিপ করিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিট করার প্রচুর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কী বলব, কখনও পারিনি। এও কোনও দিন ক্রিকেট থেকে মুছে যাবে না। সারা দুনিয়ার লেগ স্পিনারদের দেখেছি এই একটা ‘ড্রিম ডেলিভারি’ করার জন্য সব সময় কী আপ্রাণ চেষ্টা করে তারা। এর সঙ্গে কার তুলনা করা যায় জানেন? সেই কালো কুচকুচে ল্যান্ড লাইন ফোন। অনেকের কাছেই তখন ফোন মানে বিলাসিতা। একটা ফোন পাওয়ার জন্য কী অধীর অপেক্ষা। প্র্যাক্টিস বা স্কুল থেকে ফিরে জানার কী প্রবল ইচ্ছা যে, বান্ধবী ফোন করেছিল কি না। অতটা সরাসরি তো আর জিজ্ঞাসা করা যেত না, তাই প্রশ্নটা হত, “কোনও ব্ল্যাঙ্ক কল আসেনি তো?” বেশির ভাগ সময়ই উত্তর আসত, “না”।
কোথায় গেল সেই সব দিনগুলো? |