লগ্নি সংস্থার থাবা যৌনপল্লিতেও
বেসরকারি লগ্নি সংস্থাগুলি থাবা বসিয়েছে যৌনকর্মীদের সঞ্চয়েও। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি কোচবিহার, দিনহাটার নানা যৌনপল্লির বাসিন্দাদের একাংশ টাকা না পেয়ে এ বার মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দিনহাটার এক যৌনকর্মী পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত ৫ মে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জেনেছে, দিনমজুর, চাষি, ছোট ব্যবসায়ী তো আছেনই, তা ছাড়া অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন যৌনপল্লি এলাকায় কৌশলে এজেন্ট ঢুকিয়ে টাকা তোলার জাল ছড়িয়েছে। চড়া সুদের প্রলোভনে যৌনকর্মীদের একাংশ সেখানে টাকা জমা করে এখন হা-হুতাশ করছেন। এত দিন চুপ থাকলেও সারদা-কাণ্ডের পরে এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যৌনপল্লিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক শিবির চালান, এমন সংস্থার কর্মীদের একাংশ জানান, যৌনকর্মীর সঞ্চয়ের টাকা হাতাতে লগ্নি সংস্থাগুলি যৌনপল্লির দালালকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করত। এজেন্ট যৌনপল্লির প্রভাবশালী মহিলাকে প্রথমে হাত করতেন। তাঁর মাধ্যমে আমানতকারী তুলে আনতেন। শুরুতে সমস্যা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে দু’একবার টাকা ফেরত দেওয়ার পরে আর অসুবিধা হয়নি। প্রতিদিনই তোলা হত মোটা অঙ্কের টাকা।
উত্তরবঙ্গের যৌনপল্লিতে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করে। এমনই কয়েকটি সংস্থার সদস্যরা জানান, যৌনকর্মীরা ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট করতে অভ্যস্ত নন। সে জন্য অন্য কোথাও টাকা জমা রেখে বেশি সুদ পাওয়ার সুযোগ মিললে অনেকেই রাজি হন। সে কথা স্বীকার করেছেন একটি লগ্নি সংস্থার এক এজেন্টও। তাঁর কথায়, “অন্য এলাকায় ঘুরে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু যৌনপল্লিতে এক বার ব্যবসা শুরু হলে এক জায়গায় বসে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জনের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায়।” কম খেটে বেশি টাকা তোলার ‘সুবিধা’ও যৌন পল্লিতে জাল ছড়ানোর অন্যতম কারণ বলে এজেন্টদের একাংশের দাবি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, যৌনকর্মীরাও লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে তা দ্রুত বাড়িয়ে ঘরবাড়ি তৈরির কথা ভেবেছেন। অনেকে মেয়াদ শেষে টাকা তুলে ব্যাঙ্ক ডাকঘরে এমআইএসে জমা করে কিছুটা নিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছেন। কিন্তু একে একে সংস্থাগুলি পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়ার পরে তাঁরা কী করবেন ঠিক করতে পারছেন না। দিনহাটা যৌনপল্লির এক মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরে নানা জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়।
পুলিশের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনহাটায় অফিস খুলে ওই অর্থলগ্নি সংস্থা ব্যবসা শুরু করে। প্রায় তিন শতাধিক যৌনকর্মী চড়া সুদের আশায় সেখানে টাকা জমা রাখেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে টাকা পাননি বলে অভিযোগ। যৌনকর্মীর অভিযোগে জনৈক পৃথ্বীশ মজুমদারের নাম রয়েছে। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। একই রকন পরিস্থিতি রয়েছে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি কোচবিহারের যৌনপল্লি এলাকায়। পুলিশ কর্তাদের অনুমান, দিনহাটায় যে ভাবে একজন যৌনকর্মী অভিযোগ দায়ের করেছেন তা দেখে অন্য এলাকার যৌনকর্মীরাও এগিয়ে আসবেন। এর পরে পুরো ছবিটা ক্রমশ স্পষ্ট হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.