জমির দলিল জাল দাবি করে এক ব্যক্তির বাস্তুভিটে দখল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর পশ্চিম ভাঙনখালি গ্রামের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা জামাত আলি শেখের বাবা প্রয়াত সুবোধ শেখ ১৯৬৮ সালে ইমান আলি বৈদ্যর কাছ থেকে ১৬ শতক জমি কেনেন। এতদিন ধরে পৈতৃক ওই জমিতেই বাস করে আসছিলেন জামাত। অভিযোগ, সম্প্রতি স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফকির শেখের নেতৃত্বে মজিদ বৈদ্য ও ইয়াদ বৈদ্যরা তা দখল করে নেয়। এদের বিরুদ্ধে থানায় জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন জামাত। গত ৫ মে অভিযোগকারী, অভিযুক্ত-সহ স্থানীয় আরএসপি এবং তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে বিষয়টির মীমাংসার জন্য থানায় বৈঠক করে পুলিশ। জামাতের বক্তব্য, সেখানে তাঁকে জমির দলিলের নকল দেখাতে বলা হয়। যদিও তিনি আসল দলিলই দেখাতে চেয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, তিনি আসল দলিল দেখাতে চাইলেও তা জাল বলে দাবি করে অভিযুক্তেরা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের নকল আনতে বলে। কিন্তু তা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় তখনই তা দেখাতে পারেননি তিনি। অভিযোগ, তার পরেই অভিযুক্তেরা তাঁর জমিতে জোর করে ঘর তৈরি করে।
বাসন্তী ব্লকে আরএসপি-র সহকারী সভাপতি মিণ্টু ইসলাম বলেন, “এটা অত্যন্ত অন্যায় ও দুঃখজনক ঘটনা। একজন গরিব চাষির জমি যে ভাবে তৃণমূলের নেতার মদতে দখল করা হয়েছে তা লজ্জাজনক।”
তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে দলের বাসন্তী ব্লকের সভাপতি মান্নান শেখ বলেন, “যে জমিতে জামাত বাস করছে তার মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ নিয়ে মীমাংসার জন্যই থানায় বৈঠক ডেকে দলিল দেখতে চাওয়া হয় জামাতের কাছে। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। এর পরেই মজিদ ও ইয়াদ বৈদ্যরা গিয়ে জমি দখল করে। তবে ওদের সঙ্গে থেকে ফকির ঠিক কাজ করেনি। ওর কাজের দায় দল নেবে না।”
অন্যদিকে ব্লক তৃণমূল সভাপতি ফকিরকে দলের সক্রিয় কর্মী বললেও সম্পূর্ণ উল্টোসুর শোনা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের গলায়। তিনি বলেন, “জমি দখলের কোনও ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নন। আর ফকির একজন সমাজবিরোধী। ও কোনওভাবেই দলের কেউ নয়। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমি পুলিশ-প্রশাসনকে বলব।”
আর অভিযুক্ত ফকির শেখ কী বলছেন? “আমি ওই এলাকায় দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করি। মজিদ বৈদ্য ও ইয়াদ বৈদ্য আমাদের দলের সমর্থক। ওই জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক থাকায় মীমাংসার জন্য বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু জামাতের জন্য সমস্যা মেটেনি। তাই মজিদ ও ইয়াদ জমি দখল করে ঘর তৈরি করে। তবে আমি ওদের এ সব করতে বলিনি। কেন আমার নাম জড়াল আর কেনই বা আমাকে সমাজবিরোধী বলা হল বুঝতে পারছি না।”
জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। জমির দলিলের প্রত্যয়িত নকল না পাওয়া পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।” |