তাঁর পছন্দ পরিচালক সত্যজিত্‌ রায় টোটালিটি নিয়ে সত্যজিত্‌ রায়ের পাশে কেউ নেই। আমি ওঁর তুলনায় চলেছি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ওঁর প্রথম দশ বছরে শুধু ‘পরশপাথর’ আর ‘অভিযান’ বাদ দিলে সব ক’টা ছবি মাস্টারপিস। ঋত্বিক ঘটক ব্রিলিয়ান্ট কোনও সন্দেহ নেই। যে রাত্তিরে ও মারা গেল, ওর বিছানার পাশে আমি ছিলাম। ঋত্বিক যথেষ্ট ভাল। কিন্তু মানিকবাবুর ধারে কাছেও নয়। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র সুপ্রিয়ার ওই সংলাপটা এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে আজও লোকে কথা বলে“দাদা, আমি বাঁচতে চাই।” কিন্তু তার আগে অনিলের ডায়লগটা আমার পছন্দ হয়নি। বড় মেলোড্রামা। নাগরিক মন থাকলে এত মেলোড্রামা থাকে না। তপন সিংহ তপনবাবু বেশ ভাল ভাল কিছু ছবি করেছেন। আমার কাছে ওঁর সব চেয়ে ভাল কাজ ‘ক্ষণিকের অতিথি’। তরুণ মজুমদারও ভাল। শুধু তরুণবাবুকে আমি বক্স অফিস বা দর্শকের চাহিদার কথা মাঝেমধ্যে ভাবতে দেখেছি। যে ভাবনার সঙ্গে আমি একমত নই। বাঙালির তিন প্রিয় চরিত্র ঘনাদা প্রেমেন মিত্তিরের ঘনাদা অসামান্য সৃষ্টি। আমার দারুণ লাগে। চরিত্রটার মধ্যে অসম্ভব ডেপ্থ আছে। ব্যোমকেশ ব্যোমকেশ খুব ভাল। চরিত্রটা যতই সত্যান্বেষীর হোক, ব্যোমকেশের ভিতরে আমি সমাজটাকে পাই। ফেলুদা ফেলুদা আমাকে টানেনি। ফেলুদার মধ্যে কোথাও আমি সমাজটাকে দেখতে পাই না। ভীষণ সুপারফিসিয়াল। আমার তো মনে হয় ফেলুদাকে নিয়ে বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করা হয়। নায়ক নাসিরুদ্দিন শাহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় উত্তমকুমার নাসির অতুলনীয়। এই রকম চেহারা। কোঁচকানো চোখ। ঢুকে যাওয়া গাল। কিন্তু কী অভিনয়টাই না করে। ক্যামেরার পিছনে থেকেও এক এক সময় আশ্চর্য হয়ে গেছি। অবিসংবাদী এক নম্বর। সৌমিত্র আমার খুব পছন্দের অভিনেতা। যত বয়েস বাড়ছে তত যেন সৌমিত্রর অ্যাক্টিং আরও পরিণত হচ্ছে। আমি ওর সঙ্গে খুব কমফর্টেবল। কেন যে ‘নায়ক’ করার সময় মানিকবাবু ওকে বাদ দিয়েছিলেন জানি না। আমি হলে সৌমিত্রকেই নিতাম। উত্তম অভিনেতা হিসেবে সৌমিত্রকে আমি উত্তমের আগে রাখব। উত্তমের সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ‘রাতভোর’। তার পর আর কাজ করা হয়নি। উত্তম শুরুর দিকে ভাল অভিনেতা ছিল না। কিন্তু ওর একটা চারপাশ দেখে অনুকরণ করার, শিখে নেওয়ার দারুণ ক্ষমতা ছিল। যেটা দিয়ে অনেক দূর গেছিল। একই কথা সুচিত্রা সম্পর্কে আমি বলতে পারি না।