|
|
|
|
দায় নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর |
এগরার ফুটপাথে হকার-শাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে ছোট-বড় দোকান। ‘অদৃশ্য’ হয়েছে ফুটপাথ। কোথাও হাত পড়েছে রাস্তাতেও। দোকান ঠেলে পথ চলাই দায় এগরাবাসীর।
পুরসভার হিসাবে, প্রধান রাস্তাগুলির দু’পাশে হকার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ফুটপাথ, পার্ক তো বটেই, রাস্তার প্রায় অর্ধেকও তাঁদেরই দখলে! অথচ ১৯৯৩ সালে এগরা পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগে ছবিটা এমন ছিল না। প্রধান রাস্তার দু’দিকে পূর্ত দফতরের জায়গায় ছিল ফুটপাথ, রেলিং ঘেরা সুদৃশ্য পার্ক। ‘শহর’ হওয়ার পর ক্রমশ পাল্টে গেল ছবিটা। এগরা শহরের দুই সাংস্কৃতিক সংস্থার দুই সম্পাদক চক্রধর দাস ও শুভাশিস মাইতির আক্ষেপ, “শহরের রুচিটাই যেন বদলে গিয়েছে।”
এগরা কলেজ রোড ও হাসপাতাল রোডের একাংশ, এগরা মিলনী’র রাস্তা, এগরা হাইস্কুল রোড, ত্রিকোণ পার্ক, দিঘা রোড বাইপাস ও সংলগ্ন রাস্তাগুলির দু’পাশে স্থায়ী-অস্থায়ী গুমটি, ব্যবসায়ীদের পসরা, ঠেলা রিকশার দাপটে নাজেহাল পুরবাসী থেকে শহরে আসা লোকেরা। রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় প্রায়ই তৈরি হয় তীব্র যানজট। পুলিশও গোটা বিষয়টি নিয়ে তিতিবিরক্ত।
এগরা থানার ওসি গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যান নিয়ন্ত্রণে প্রধান সমস্যা এই হকাররাই। পুরসভা ও রাজনৈতিক দলগুলিকে বলেও কোনও লাভ হয়নি। মানবিকতার খাতিরে এবং রাজনৈতিক দলগুলির আরও কিছু সময় চেয়ে নেওয়ার অনুরোধে কঠোর ভূমিকাও নেওয়া যাচ্ছে না। এ দিকে, দিনের পর দিন রাস্তা দখল হওয়ার বাড়ছে যানজট।” |
|
রাস্তা বেআইনি ভাবে দখল করে গুমটি দোকান। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
পুরসভা সূত্রে খবর, কয়েক বছর ধরে হকার অপসারণ, পুনর্বাসন ও সৌন্দর্যায়নের বিষয়গুলি শুধু প্রস্তাব আকারেই ছিল, কাজ কিছুই হয়নি। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল বোর্ডই প্রথম এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়। ২০১০ সালে হকার সমীক্ষা করে গ্রেড অনুযায়ী নাম নথিভুক্ত করা হয়। তখন হকারের স্বীকৃতি পেতে ‘বাইরে’র লোকজনও ভিড় করে শহরে। দাবি ওঠে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আগে করে তারপর উচ্ছেদ করতে হবে, প্রত্যেক হকারকে ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাঙ্ক-ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি। পুরপ্রধান কংগ্রেসের স্বপন নায়ক জানান, তখন সিদ্ধান্ত হয় রাস্তার দু’পাশে বসা মাছ, সবজি-সহ অন্যান্য পণ্যের হকারদের ও শহরের কয়েকটি হাটের পসারিদের জন্য খুঁটি ও শেড দেওয়া পৃথক ব্যবস্থা করা হবে। তুলে দেওয়া হবে আগের হাটগুলিও।
অপেক্ষাকৃত বড় হকারদের জন্য সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড, নরপুকুর ও পটলাইকায় মার্কেট কমপ্লেক্সে স্টলের ব্যবস্থা করা হবে। সাহায্য নেওয়া হবে পিপিপি মডেলেরও। স্টলের জন্য পুরসভা কিছু ভর্তুকি দিলেও নগদ টাকা দিয়ে স্টলগুলি কিনতে হবে হকারদের। সেই অনুযায়ী সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে পটলাইকায়। নরপুকুরেও কাজ হবে। তিনি জানান, “এগরার মতো ছোট পুরসভার পক্ষে একসঙ্গে এত হকারকে একত্রে পুনর্বাসন দেওয়া অসম্ভব। তাই ধাপে ধাপে কাজ করা হচ্ছিল। চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতাও। কিন্তু তা মেলেনি।” অভিযোগ, পাওয়া যায়নি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাহায্যও।
পুরপ্রধানের অভিযোগ, হকার ইস্যুতে দ্বিচারিতা করছে তৃণমূল। পুরসভার ভিতরে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরেও বাইরে হকারদের মদত দিচ্ছে তারা। উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের বীরেন নায়ক অবশ্য তা অস্বীকার করে বলেন, “ব্যর্থতার দায় এড়াতে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।” তাঁর কটাক্ষ, “পুরপ্রধান বামেদের মদতে হকার উচ্ছেদ নিয়ে তুঘলকি চিন্তা করছেন। দশকের পর দশক ধরে যে সব হকার ব্যবসা করছেন, তাঁদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে আলোচনাই চায়নি কংগ্রেস। হকার উচ্ছেদ, পুনর্বাসন ও সৌন্দর্যায়ন নিয়ে পুরপ্রধানের কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নেই।”
এগরা শহর তৃণমূল হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ পণ্ডার অভিযোগ, “পুরপ্রধান হকারদের জন্য কোনও পদক্ষেপই করতে পারেননি। হকারদের সাধ্যের বাইরে অনেক বেশি টাকা দিয়ে স্টল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্বজনপোষণও হচ্ছে।” তাঁর হঁুশিয়ারি, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হলে আমরা সরব না।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুব্রত পণ্ডার বক্তব্য, “বৃহত্তর স্বার্থে হকারদের সরে যাওয়া উচিত। তবে তাঁদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে পুরসভাকে।” ভোটের স্বার্থে কোনও দলই হকারদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে পারছে না। |
|
|
|
|
|