উত্তর কলকাতা
পানিহাটি
চাইলেই চোলাই
শুধু একটা ফোন, ব্যস। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলে আসবে পানের পাউচ, বোতল।
চোলাইয়ের অভিনব এই ‘হোম ডেলিভারি’ চলছে পানিহাটি পুর এলাকায়। অভিযোগ, প্রকাশ্যে অবৈধ এই ব্যবসা চললেও প্রশাসনের হেলদোল নেই।
অভিযোগ, দিনে ও রাতে প্রায় সমান তালে চলতে থাকা এই চোলাই মদের ঠেক গজিয়ে উঠেছে এমন জায়গায় যেখানে একটু নজর করলেই চোখে পড়বে বিষয়টি। অথচ কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা এই ব্যবসা নজরে আসে না পুলিশ আর আবগারি কর্তাদের। প্রশাসনিক গাফিলতির সুযোগে বাস রাস্তার ধারের এই ঠেকে চালু হয়েছে চাট-সহ চোলাই ও দেশি মদের হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও।
সোদপুর স্টেশন থেকে মধ্যমগ্রাম চৌমাথাগামী বারাসত রোডের মঙ্গলদীপ বাস স্টপে গড়ে উঠেছে এই চোলাইয়ের ঠেক। রাস্তা দিয়ে বাস, ট্যাক্সি, অটো-সহ বিভিন্ন যানবাহনে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এই রাস্তারই উত্তর দিকে বাসরাস্তা ঘেঁষেই নতুন নিকাশি নর্দমার প্রায় উপরে গড়ে উঠেছে বাঁশের খুঁটিতে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া দরমার বেড়ার ঝুপড়ি। দিনে ও সন্ধের পর এই ঝুপড়ি আপাতদৃষ্টিতে দিনমজুর ও রিকশাওয়ালাদের খাবার হোটেল। কিন্তু ভাত-ডাল-মাছ-তরকারির পাশাপাশি অর্ডার করলে এখানেই মিলবে ১৫ ও ২৫ টাকার চোলাই পাউচ। ‘দেশি’র বোতলও পাওয়া যাবে এখানেই। চাটের তালিকায় রয়েছে মাছভাজা আর দু’পাশের দু’টি পানের গুমটিতে ঝুলতে থাকা চিপস বা বাদাম।
এর ঠিক পাশে একই রকম ছাউনির নীচে কোনও ঘেরাটোপের তোয়াক্কা না করে অন শপের মতোই গজিয়ে উঠেছে আর একটি ঠেক। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত এই ঠেকে বস্তায় ভরে রাখা হয় চোলাইয়ের পাউচ আর ‘দেশি’র বোতল। আবার শুরু হয় সন্ধে নাগাদ। চলতে থাকে রাত ১০টা বা স্টক শেষ হওয়া পর্যন্ত। দিনের বেলা ভিড় না করেই একের পর এক মদ্যপায়ী কারণবারি পান করে চলে যান এখান থেকে। তবে যাওয়ার আগে খালি প্লাস্টিক অবশ্যই জমা দিতে হয় বিক্রেতার কাছে।
রিকশাচালক, দিনমজুর ছাড়াও আশপাশের নির্মীয়মাণ বাড়ির কিছু কর্মীও এই ঠেকের খদ্দের। সন্ধের পরে তাদের অর্ডার থাকলে বা তাঁরা ফোনে অর্ডার দিলে থলে ভর্তি করে পাউচ আর বোতল নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেও দিয়ে আসে বিক্রেতার লোক। পানিহাটি পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই ঠেকের খদ্দের দৈনিক কয়েকশো। অভিযোগ, মধ্যমগ্রাম, নিউব্যারাকপুর সংলগ্ন এলাকা থেকে বস্তাবন্দি করে আনা হয় এই চোলাইয়ের পাউচ প্যাকেটগুলি। এ ভাবে দু’আড়াই বছর ধরে চলছে এই ঠেক।
পথচারী সুজয় নস্কর বলেন, “রাস্তা দিয়ে চলার সময় সহজেই দেখা যায় পাউচ ছিঁড়ে মুখে ঢালছে মদ্যপায়ীরা। পথচলতি হাজার হাজার মানুষের নজরে এলেও প্রশাসনের নজরে বিষয়টি কেন আসছে না এটাই বিস্ময়ের। ওই ঠেকের জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। পুলিশের এটা দেখা উচিত।” ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের অপর্ণা ঘোষ বলেন, “ওই ঠেকটা নিকাশি নর্দমা তৈরির সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে। পুলিশ এলেই ওরা ঝোপের মধ্যে, হোটেলের মধ্যে ওদের মালপত্র লুকিয়ে ফেলে। কিছুতেই ওই ঠেকটা স্থায়ী ভাবে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। পুলিশকে আবার বলে দেখছি কী করা যায়।”
উত্তর ২৪ পরগনার আবগারি দফতরের সহকারী কমিশনার (খড়দহ ডিভিশন) দিলীপ দে-র বক্তব্য, ‘‘পানিহাটির ওই এলাকায় চোলাই মদ তৈরির প্রচুর কারখানা ও ভাটি রয়েছে। ওখানে প্রায়শ হানা দেওয়া হয়, ধরপাকড়ও হয়। এই সে দিনও প্রচুর চোলাই মদ উদ্ধার হয়েছে, ধরা হয়েছে কয়েক জনকে। তবে বিশেষ কোনও অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ যদিও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। তাই জানা নেই।”

অলংকরণ: অনুপ রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.