সম্পাদকীয় ২...
প্রশ্নটি নীতির
বিচারবিভাগীয় অতিসক্রিয়তা যে ভারতীয় সমাজচালনার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হইয়া দাঁড়াইয়াছে, এই আলোচনাও এখন পুরাতন হইতে চলিল। তবু আবার নূতন করিয়া আদালতের অতিসক্রিয়তার বহরে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ না করিয়া উপায় থাকে না। কয়েকটি টিভি চ্যানেল সম্পর্কে কলিকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি সিদ্ধান্ত লইয়াছে, তিন সদস্যের কমিটি গড়িয়া তাহার হস্তে ভবিষ্যত্‌ চ্যানেল-চালনার ভার দেওয়া হইবে। কমিটির প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হইবেন এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। কেন আর সব ছাড়িয়া বিচারবিভাগ হঠাত্‌ চ্যানেল পরিচালনার ব্যবস্থাপনা নিজনিযুক্ত কমিটির হেফাজতে রাখিতে চাহে বোঝা দুষ্কর। ‘বিচার’ নামক কাজটির প্রধান উদ্দেশ্য তো দুই বিবদমান পক্ষের মধ্যে মীমাংসা তথা রায় প্রদান করা। কোনও পক্ষকে সরাসরি চালনা করার কাজ তো ইহার মধ্যে পড়ে না! মাননীয় আদালতের প্রতি সম্মান রাখিয়াই প্রশ্ন, ইহা কি অবান্তর অনধিকারের সহিত একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্তও নহে? অতঃপর যদি কোনও প্রতিষ্ঠান অন্যতম বিবদমান পক্ষ হয়, কিংবা বিবাদের প্রত্যক্ষ পটভূমি হয়, আদালত কি তবে সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যভারও নিজের হাতে লইবে? চালনা কিংবা পরিচালনা একটি প্রশাসনিক কাজ, এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব ও বৈচারিক দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্যটি কেবল তত্ত্বগত নহে, নিতান্ত ব্যবহারগত, স্পষ্ট ও গুরুতর! ভারতীয় বিচারবিভাগ কি ক্রমেই নিজ বৃত্ত হইতে সরিয়া ভিন্ন বৃত্তে পদার্পণ করিতেছে? এই পদ-বিপর্যয়ের অর্থ যে কত বিষম হইতে পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুস্বাস্থ্যের পক্ষে কত হানিকর হইতে পারে, তাহা তো ভারতীয় গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ বিচারবিভাগের নিজেরই উত্তমরূপে অবগত থাকিবার কথা!
সাম্প্রতিক লগ্নিসংস্থা কেলেঙ্কারির সহিত এই চ্যানেল-বিপর্যয়ের ঘনিষ্ঠ সংযোগ। বৃহত্তর আর্থিক কেলেঙ্কারির জেরেই চ্যানেলগুলি বিষম ক্ষতিগ্রস্ত, এবং হাইকোর্টের অঙ্গনে মামলাটি আনীত। প্রসঙ্গত, মামলায় সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ছাড়াও আরও কতগুলি চ্যানেল ও সংবাদপত্র একই ভাবে গভীর সংকটাপন্ন। আপাতত বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাহাদের আর্থিক ও ব্যবহারিক ভার গ্রহণ করিয়াছে। এই মামলা-সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলির ক্ষেত্রেও, সেগুলি টিঁকিয়া থাকিবে কি না, থাকিলে কী ভাবে থাকিবে, কাহার দ্বারা চালিত হইবে, সে সবই কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রশ্ন। সে সব প্রশ্নের উত্তরের দায় আদালতের নহে। অবশ্য প্রশ্নটি একেবারেই দায়-ভিত্তিক নহে। প্রশ্নটি আদতে, নীতির। বিচারবিভাগের কাজ কী, সেই নীতি স্পষ্ট হইলে এমন ধরনের বিপর্যয় ঘটিবার কথা নহে। নীতিগত স্পষ্টতার সূত্রে, একটি অত্যন্ত মৌলিক প্রশ্ন বিচারবিভাগের সকল স্তরে উঠা বাঞ্ছনীয়: সমাজ হইতে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় না রাখিলে কি নিরপেক্ষ, স্বার্থহীন বিচারের কাজ চালাইয়া যাওয়া যায়? এবং প্রশাসনিক কাজে জড়াইয়া পড়িলে সেই দূরত্ব বজায় রাখা কি কঠিন হইয়া পড়ে না? সেই অর্থে, ইহা কি শুধুই অতিসক্রিয়তা? না কি আত্মঘাতও বটে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.