সম্পাদকীয় ১...
কথা নহে, কাজ
মুখ্যমন্ত্রী জানাইয়াছেন, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পনীতি শীঘ্রই আসিতেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পনীতি কী হওয়া উচিত, তাহা একটি বাক্যে বলিয়া দেওয়া যায় ‘শিল্পের জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহাই করা হইবে; কোনও অজুহাত, কোনও ‘তালবাহানা’ বরদাস্ত করা হইবে না’। অনুমান করা চলে, যে খসড়া রচিত হইতেছে, তাহার সুর এই তারের ধারেকাছেও বাঁধা থাকিবে না। অনুমানটি ভিত্তিহীন নহে। মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের সহিত ‘কোর কমিটি’-র প্রথম বৈঠকে জানাইয়াছেন, ১০০-২০০ একর কম জমি চাহিলে তাহা পাইতে সমস্যা হইবে না। কিন্তু হাজার একর চাহিলে মুশকিল। ‘হাজার একর’ শুনিলেই সিঙ্গুরের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়া আসিতে চাহে, কিন্তু আপাতত সেই প্রসঙ্গটি থাক। প্রশ্ন হইল, শিল্পের জন্য কত জমি প্রয়োজন, তাহা সরকার স্থির করিয়া দিবে কেন? সরকারের কাজ শিল্প রূপায়ণে সর্বার্থে সহযোগিতা করা। জমির বন্দোবস্ত করিয়া দেওয়া তাহারই অঙ্গ। সরকার পারিলে ভাল, নচেত্‌ বিনিয়োগ ভিন্‌ রাজ্যের ঠিকানা খুঁজিয়া লইবে। শিল্পমহল জমি চাহে, নির্দেশিকা নহে। কেন জমির ঊর্ধ্বসীমা, সেই প্রশ্নের একটি উত্তর পাওয়া গিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’-এ ১০০-৫০০ একর মাপের জমিই আছে। তাহাও মোট ১২০টি। তাহার মধ্যে ৭৫টি আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার দ্বীপ অঞ্চলে। অস্যার্থ, যেটুকু জমি আছে, তাহার মধ্যেই কাজ চালাইতে পারিলে ভাল, নচেত্‌ রাজ্য সরকার দায়িত্ব লইবে না। শিল্পনীতির সুরটি এই তাঁরে বাঁধিলে সমস্যা একটিই রাজ্যে নীতি থাকিবে, শিল্প থাকিবে না।
কয়েক মাস পূর্বে সৌগত রায় জানাইয়াছিলেন, তিনি একটি শিল্পনীতির খসড়া রচনা করিতেছেন। বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পপতিদের যে শিল্পনীতির আসন্ন শুভমুক্তির কথা জানাইলেন, তাহা সেই সৌগত রায়-বর্ণিত শিল্পনীতিটিই কি? আশঙ্কাটি সত্য হইলে ভয়ঙ্কর বিপদ। কারণ, সৌগতবাবু আভাসে-ইঙ্গিতে যাহা জানাইয়াছিলেন, তাহাতে টের পাওয়া গিয়াছিল যে সেই খসড়াটি আদৌ শিল্পনীতি নহে, জেদ-নামা। সেই শিল্পনীতিটি কার্যত আচার তৈরি করা আর বিড়ি বাঁধার বাহিরে বিশেষ কিছু ভাবিতে পারে নাই। মুখ্যমন্ত্রীর আস্তিনে কি সেই জেদ-নামাই আছে? শিল্পপতিদের সহিত তাঁহার বৈঠক সেই দিকেই ইঙ্গিত করিতেছে। তিনি জমি অধিগ্রহণে নিজের ঘোষিত অবস্থানের বাহিরে একটি পা-ও ফেলিবার কথা বলেন নাই, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রসঙ্গে রা কাড়েন নাই। নূতন জমি অধিগ্রহণ বিলে রাজ্য সরকারের হাতে যে বর্ধিত ক্ষমতা আসিতেছে, তাহার প্রেক্ষিতে তাঁহার অবস্থান কী হইবে, এখনও অজ্ঞাত। ১৪-ওয়াই ছাড়পত্রের প্রসঙ্গেও তাঁহার সিদ্ধান্তকে শিল্পবান্ধব বলা মুশকিল। অর্থাত্‌, বিনিয়োগকারীরা নূতন বৈঠকে পুরাতন মুখ্যমন্ত্রীকেই পাইলেন। তাহাতে খানিক সময় নষ্ট হওয়া ভিন্ন লাভ কী?
শিল্প বিষয়টিকে মমতাদেবী আদৌ যথেষ্ট গুরুত্ব দেন কি না, তাঁহার মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম দুই বত্‌সরে তাহাই স্পষ্ট হইল না। শিল্পপতিদের সহিত কোর কমিটির বৈঠকেও তিনি পর্যটন, পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন ইত্যাদির প্রসঙ্গ টানিয়া আনিয়াছেন। এই ক্ষেত্রে নাকি আর্থিক উন্নয়নের বিরাট সম্ভাবনা নিহিত। সত্য, তাঁহার দলের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে এই কথাগুলি ছিল। কিন্তু ইশ্‌তেহারে থাকিলেই তো কথাগুলি সত্য হইয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যত্‌ নিতান্তই মলিন, কারণ ভূগোল এই রাজ্যকে মারিয়া রাখিয়াছে। তবুও তিনি পর্যটনের উন্নতিসাধনের চেষ্টা করিতে পারেন। চেষ্টায় দোষ কী? কিন্তু যে বৈঠকে শিল্পায়ন লইয়া আলোচনা করিবার কথা, সেখানে পর্যটনের প্রসঙ্গ টানিয়া আনিলে তাঁহার আন্তরিকতা লইয়া প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। শিল্প গুরুতর বিষয় সেই আলোচনায় অবান্তর কথা বলিতে নাই। আর দিনকয়েক পরেই তাঁহার সরকারের দুই বত্‌সর পূর্ণ হইবে। নূতন সরকার ঘর গুছাইয়া লওয়ার জন্য সাধারণত এক বত্‌সর সময় পাইয়া থাকে। মমতাদেবী দ্বিগুণ সময় পাইয়াছেন। দুই বত্‌সরে অনেক কথা হইয়াছে। এই বার কাজ হউক। তাঁহার শিল্পমন্ত্রী যাহাই মনে করুন, শিল্পপতিরা মুখ্যমন্ত্রীর নিকট নিছক ‘সুখদুঃখের কথা’ বলিতে আগ্রহী নহেন। তাঁহারা বাণিজ্য বুঝেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই ব্যবস্থা করুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.