উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন করা নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায় চান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে টানা আন্দোলন করতে। কিন্তু ওই জেলারই কংগ্রেসের সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু তাড়াহুড়ো করে এই ধরনের আন্দোলনের পক্ষপাতী নন। সৈকতবাবু পাশে পেয়েছেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারকে। বুধবার ওই দুই নেতার সঙ্গেই তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে গিয়ে মন্ত্রী গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেই স্মারকলিপিতে তোলা প্রশ্নগুলির উত্তর তিন মাসের মধ্যে না পেলে গৌতমবাবুকে জলপাইগুড়িতে ঢুকতেও দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন সৈকতবাবুরা। কিন্তু প্রদেশ নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা মোহনবাবুর পাশেই রয়েছে। এদিন শিলিগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “কী ধরনের তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সৌমিক হোসেনেরও বক্তব্য, জেলা নেতৃত্বকে এড়িয়ে আন্দোলন করা উচিত নয়।
কংগ্রেসের এই দ্বন্দ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মন্ত্রী গৌতমবাবুও। তিনি বলেন, “মিথ্যে অভিযোগ তুলে প্রচারের আলোয় থাকার চেষ্টা অনেকেই করেন। কিন্তু জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা অনেকেই দেখছেন। তাঁরা চাইবেন না, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি হোক।” তাৎপর্যপূর্ণভাবেই এই দিনই মোহনবাবুও জানান, রাজনীতির সঙ্গে উন্নয়নকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে করলা অ্যাকশন প্ল্যান বাবদ ১৬ কোটি টাকা চাইছি। বাম আমলে কিছু পাইনি। দু’দিন আগে ওই প্রকল্প মঞ্জুর করে ৫ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরই ওই টাকা বরাদ্দ করেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
গৌতমবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির জবাব পরিষ্কার করেই দিয়েছেন। সৈকতবাবুরা অভিযোগ করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বাজেটে ১৩১ কোটি টাকা খরচের কথা বলা হয়। অথচ বিধানসভায় বক্তব্য পেশের সময়ে ৬৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে কেন? গৌতমবাবুর জবাব, “আমার দফতরের বাজেটে বরাদ্দ ১৩১ কোটি নানা খাতে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা খরচের হিসেব আমার হাতে এসেছে। সেই তথ্য বিধানসভায় দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার হিসেব সংশ্লিষ্ট প্রাপকরা দিলে তখন তা বিধানসভায় জানাব।” গৌতমবাবু জানান, তথ্য-প্রমাণ নিয়ে যে কেউ অভিযোগ করলে তিনি জবাব দিতে বাধ্য। তাঁর কথায়, “কিন্তু ভিত্তিহীন অভিযোগে আন্দোলন করে জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটাতে দেব না। বিধানসভার দায়িত্বশীল কোনও সদস্য যদি ওই কাজে যুক্ত হন, তা হলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আমি বিধানসভার স্পিকারকে সব জানাব। প্রয়োজনে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনার জন্য অনুমতি চাওয়া হবে।”
এই প্রসঙ্গে বিধায়ক সুখবিলাসবাবু জানান, তিনি বিধানসভার অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক স্থায়ী সমিতির সদস্য হওয়ার সুবাদে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান পেয়েছেন। সুখবিলাসবাবু বলেন, “ওই তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমি বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় ওঁর দফতরের নানা অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। বিধানসভার বাইরে তা নিয়ে বলেছি। উনি চাইলে আমার বিরুদ্ধে যে কোনও জায়গায় অভিযোগ জানাতে পারেন।”
|