|
|
|
|
আপত্তি অর্থ দফতরের |
টাকা খরচের খুঁটিনাটি হিসেব দিচ্ছে না ক্লাবগুলি |
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
রাজ্যের ক্লাবগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে বিলোনো নিয়ে বহু দিন ধরেই সরব বিরোধীরা। অভিযোগ, সরকারি নির্দেশিকা এড়িয়ে কেবল তৃণমূল বিধায়কদের সুপারিশের ভিত্তিতেই মুড়ি-মুড়কির মতো টাকা বিলোনো হয়েছে। সেই টাকার হিসেব দাখিলের পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি তুললেন অর্থ দফতরের অডিট অফিসারেরা।
ওই অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, সরকারি অনুদানের টাকা খরচ করে অধিকাংশ ক্লাব যে ভাবে তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) জমা দিয়েছে, তা যথেষ্ট তো নয়ই, এমনকী আইনসম্মতও নয়। ওই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে, তার কোনও খুঁটিনাটি তথ্য নেই ইউসি-তে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু টাকার যথার্থ ব্যবহার হয়েছে বলে দায় সেরেছেন সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সভাপতি বা সম্পাদক।
কিছু ক্লাব আবার পরের বার অনুদান পাওয়ার আর্জি জানিয়ে আবেদনপত্র জুড়ে দিয়েছে প্রথম বারের ইউসি-র সঙ্গে। এতেই প্রমাদ গোনে অর্থ দফতর। অফিসারদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি তহবিল থেকে যেখানে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে দু’লাইনের এই অসম্পূর্ণ শংসাপত্র কি আদৌ যথেষ্ট? সরকারি প্রকল্পে অর্থ খরচ করে যেখানে বিভাগী অফিসারদের ব্যয়ের খুঁটিনাটি জমা দিতে হয়, সেখানে ক্লাবের দেওয়া ইউসি-তে কেন ন্যূনতম তথ্যটুকুও থাকবে না?
এর পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। মূলত অডিট অফিসারদের আপত্তিতেই বেসরকারি সংগঠন বা সংস্থার ক্ষেত্রে ইউসি-র চেহারায় বদল ঘটায় অর্থ দফতর। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “নতুন চেহারার ইউসি-তে টাকা খরচের খুঁটিনাটি তথ্য জানানো আবশ্যিক করা হয়েছে। কেউ যদি টাকা খরচ করতে না পারে, তার কারণও ব্যাখ্যা করতে হবে নতুন ইউসি-তে।” আর এতে সরকারি টাকার যেমন-তেমন খরচে কিছুটা হলেও লাগাম টানা যাবে বলে মনে করছেন অর্থ দফতরের অফিসারেরা।
নতুন ইউসি সব দফতরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে অর্থ দফতর। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “ক্লাবগুলি ইউসি জমা দেবে ক্রীড়া দফতরে। সেই তথ্যে দফতরের অফিসার সন্তুষ্ট হলে তিনি তাঁর মন্তব্য-সহ ইউসি পাঠায়ে দেবেন আমাদের কাছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ দফতরই।” এতেই সমস্যায় পড়েছে ক্রীড়াকর্তাদের একাংশ। অর্থ দফতরের দাওয়াইয়ে যে কিছুটা ‘কাজ’ হয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে তাঁদেরই এক জনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “ক্লাবগুলোর দু’লাইনের ইউসি আমরাই জমা নিয়েছি। কিন্তু এ বার আর নিতে পারব না। কারণ, দিনের শেষে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হবে।”
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের দাবি, “সরকারি নিয়ম মেনেই ক্লাবগুলি ইউসি দিয়েছে। তার পরেই তাদের ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। যারা ইউসি দিতে পারেনি, তাদের টাকাও দেওয়া হয়নি।”
ক্লাবগুলিকে দফায় দফায় আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ২০১১ সালে প্রথম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সে বার ৮০০ ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। এতে সরকারের খরচ হয় ১৬ কোটি টাকা। বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ যখন দিন দিন বাড়ছে, তখন এই দান-খয়রাতির আদৌ কোনও যৌক্তিকতা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। কিন্তু সেই আপত্তি ধোপে টেঁকেনি। পরের বছর, ২০১২-য় আরও ১৬০০ ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেয় রাজ্য।
সরকারের বক্তব্য ছিল, ক্লাবগুলির উন্নয়নে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। খেলার সামগ্রী কিংবা ক্লাবঘর তৈরি, নিজেদের প্রয়োজন মতো টাকা খরচ করবে তারা। পরে ওই খরচের হিসেব ক্রীড়া দফতরে জমা দিয়ে দেবে। রাজ্য অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “২০১২-য় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, যারা প্রথম বার ২ লক্ষ টাকা পেয়েছে, পরের বার তাদের ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তখনই ক্লাবগুলিকে বলে দেওয়া হয়, প্রথম বারের টাকা খরচের খুঁটিনাটি জমা না দিলে দ্বিতীয় বারের টাকা আটকে রাখা হবে। তার পরেই ইউসি জমা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।”
কিন্তু তার চার মাস পরেও দেড়শো ক্লাবের নামে কাটা চেক এখনও পড়ে রয়েছে মহাকরণে। কেন? রাজ্য ক্রীড়া দফতরের এক অফিসার বলেন, “গত ১১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে অনেক ক্লাবকেই ডাকা হয়েছিল ইন্ডোরে। সবাই না আসায় ক্লাবের নামে কাটা চেকগুলি ২০ দিন পরে বান্ডিল করে মহাকরণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দেড়শোর মতো ক্লাবে আর চেক পৌঁছয়নি।”
তালিকায় নাম আছে সাগরদিঘির বিজয় সরস্বতী ক্লাবের। তার সভাপতি শ্যামল মালাকার বলেন, “মহাকরণে যোগাযোগ করা হলে আমাদের বলা হয়, বিধায়কের হাত দিয়ে চেক পাঠানো হবে। তার পর থেকে ওঁকে বলেই যাচ্ছি। চেক আর পেলাম না।” ওই এলাকার বিধায়ক, রাজ্যের উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা এ ব্যাপারে বলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রীকে আবার বলব।” আর ক্রীড়ামন্ত্রীর বক্তব্য, “এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তখন কিছু জেলায় নির্বাচনী বিধি থাকায় ওরা টাকা নিতে পারেনি। ধীরে ধীরে নিচ্ছে।”
|
পুরনো খবর: ক্লাবকে অর্থসাহায্যে বিধিভঙ্গের অভিযোগ, মমতা বললেন কুৎসা |
|
|
|
|
|