|
|
|
|
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য মুক্ত কারাগারের চিন্তা |
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
এক সময় বন্দুক হাতে পথে নেমে ‘মুক্তাঞ্চল’ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন যাঁরা, এখন তাঁদেরই ‘মুক্ত জীবন’ ফিরিয়ে দিতে চায় রাজ্য সরকার।
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য একটি মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি করার কথা ভাবছে রাজ্য। পরিকল্পনা কার্যকর করতে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ, আইজি (আইবি) ও পি গুপ্ত এবং আইজি (কারা) রণবীর কুমার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, মেদিনীপুরের পুলিশ ক্যাম্পকে ‘মুক্ত সংশোধনাগার’ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানেই রাখা হবে এই সব প্রাক্তনীদের। তবে পুলিশ ক্যাম্পকে আদৌ মুক্ত সংশোধনাগার করা যাবে কি না, খতিয়ে দেখছে আইন দফতর। মহাকরণের খবর, সব চূড়ান্ত হলে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তা রাজ্য মন্ত্রিসভায় বৈঠকে পেশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হঠাৎ এই ভাবনা কেন? রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেন ছাড়াও প্রায় ৭০ জনেরও বেশি ছোটবড় মাপের মাওবাদী নেতা আত্মসমর্পণ করেছেন। এর মধ্যে ৩২ জনকে হোমগার্ডে চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে রাজ্য। তাঁদের সঙ্গে মহাকরণে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা যে কোনও মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা মামলাগুলির বিচার শেষ না হওয়ায় হোমগার্ডের চাকরি নিয়ে কিছু আইনি জটিলতাও তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটেই মুক্ত সংশোধনাগারের ভাবনা।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, “পুলিশের ঘেরাটোপে মুক্ত সংশোধনাগারে থাকলে নিরাপত্তার সমস্যা মিটবে। মুক্ত সংশোধনাগার হওয়ায় পরিবার নিয়ে থাকা, বাইরের জগতে মেলামেশা ও কাজ করার সুযোগও থাকবে। আবার, বিচারাধীন মাওবাদীদের জেলে রাখার যে উদ্দেশ্য, সেটাও মেনে চলা হবে।” রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, এই ভাবনা নতুন নয়। ঝাড়খণ্ড ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেদিনীপুর শহরের পুলিশ ছাউনি মুক্ত সংশোধনাগারের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে।
কিন্তু অন্য কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। কারণ, বিচারাধীন বন্দিদের মুক্ত সংশোধনাগারে রাখার কোনও আইনি ব্যবস্থা নেই। স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই কর্তা বলেন, “আত্মসমর্পণকারী বিচারাধীন মাওবাদীদের মুক্ত সংশোধনাগারে রাখতে হলে কারা আইন সংশোধন করতে হবে। সেটা সম্ভব কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কারা দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যের আইনে দু’রকম মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি সুযোগ রয়েছে। এক ধরনের মুক্ত সংশোধনাগারের ক্ষেত্রে জেলের ঘেরাটোপ না থাকলেও নির্দিষ্ট ‘লক-আপ টাইম’ থাকে। যার অর্থ, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেলে ফিরতে হবে বন্দিদের। অন্য ক্ষেত্রে ‘লক-আপ টাইম’ থাকে না। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধরনের মুক্ত সংশোধনাগারই তৈরি করতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে সেটা কতদিনে হবে, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|