দার্জিলিঙে চলছে খোঁজ, উদ্বিগ্ন সেনাবাহিনী গোপন স্যাটেলাইট
ফোনে কথা চিন-নেপালে
দার্জিলিংয়ের আশপাশ থেকে একটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের হদিস পেল সেনাবাহিনী। মাস খানেক আগে নজরে আসা সেই ফোন থেকে নিয়মিত কথা হচ্ছিল নেপাল, তিব্বত এবং চিনে। ভারতে আমজনতার জন্য নিষিদ্ধ এই টেলিফোন ব্যবহারের খোঁজ পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সেনাবাহিনীর লেবং ইউনিট। স্যাটেলাইট ফোনটির অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশগত অবস্থান দেখে জানা যায়, এলাকাটি দার্জিলিংয়ের উপকণ্ঠের জনপদ সিংমারি ও তার আশপাশের এলাকা, ঘটনাচক্রে যেখানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুঙ্গেরও বাড়ি।
স্যাটেলাইট ফোনটি কে ব্যবহার করছেন, কেনই বা উত্তর-পূর্ব সীমান্তের এমন একটি এলাকা থেকে নেপাল-চিনে কথা বলা হচ্ছে, কোথা থেকে এই ফোনটি দার্জিলিঙে এল তা নিয়ে তদন্তে নামে সেনাবাহিনী। সেনা গোয়েন্দাদের তল্লাশি শুরু হতেই ফোনটি সুইচ অফ করে দেওয়া হয়। ফলে সেটি উদ্ধার হয়নি। কার হেফাজতে এটি এখন রয়েছে তা-ও জানা যায়নি। যদিও পুরো ঘটনাক্রমে কার্যত বেশ উদ্বিগ্ন সেনা-সহ অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি। ক্রমাগত ওই এলাকার উপর নজরদারি চলছে বলে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, নেপাল ও তিব্বত সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় সেনা বাহিনীর সিগন্যাল ইউনিটগুলি এই চত্বরে সক্রিয়। কারণ সীমান্তবর্তী এলাকার যাবতীয় দেশবিরোধী কাযর্কলাপের নজরদারি করতে হয় সেনাকে। এ ভাবেই লেবংয়ের সেনা ইউনিট স্যাটেলাইট ফোনটি প্রথম চিহ্নিত করে। ফোনের অবস্থান জানার পর কারা সেটি ব্যবহার করতে পারে, এই তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও চিন্তিত হয়ে পড়ে সেনা। এক সেনা কর্তা জানাচ্ছেন, অভ্যন্তরীণ যে সব গোলমাল চলছে তাতে বিদেশি শক্তির হাত থাকতে পারে। তবে ফোনটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে না। ওই কর্তা জানান, দার্জিলিং থেকে ইদানীং নেপালে কোটি কোটি টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। পাহাড়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই কাজে যুক্ত বলেও জানা যাচ্ছে। তার পাশাপাশি, এখানকার অস্থির পরিস্থিতির জন্যও এখন বিদেশি সহায়তা আসছে কি না তা জানাটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। স্যাটেলাইট ফোনটি পাওয়া গেলে সেই রহস্যও উন্মোচন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালের ইলম, ঝাপা এবং পঞ্চথর জেলায় যে ভাবে চিনের প্রভাব বেড়েছে তাতে সেনাবাহিনীর কপালে ভাঁজ। সিকিম থেকেও গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন চিনা চরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারত সরকার সম্প্রতি নেপাল-ভুটান সীমান্তের সমস্ত ধর্মীয় স্থানে (বিশেষত গুম্ফা) নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন দার্জিলিং থেকে স্যাট ফোনের মাধ্যমে নেপাল-চিনে যোগাযোগ করা হয়েছে তা জানাটা জরুরি।
সেনাবাহিনী স্যাটেলাইট ফোনটির অবস্থান জানার পরেই রাজ্য সরকারকে জানায়। সতর্ক করা হয় কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকেও। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “সেনাবাহিনীর কাছ থেকে জানার পরেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চিন্তার বিষয়। দিল্লিকেও সব কিছু জানানো হয়েছে। সজাগ রয়েছি।” ওই কর্তার কথায়, ফোনটি যে হেতু বৈধ উপায়ে ব্যবহার করা হচ্ছিল না, তাই ধরেই নেওয়া হচ্ছে কোনও সৎ উদ্দেশ্যে সেটি ব্যবহার হচ্ছিল না।
কেন উদ্বেগে সেনা-সহ অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি?
এক সরকারি মুখপাত্র জানান, এ দেশে যে কেউ চাইলেই স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করতে পারে না। ব্যবহার করতে হলে দিল্লিতে যোগাযোগ মন্ত্রক থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। সাধারণত সেনা, পুলিশ, সরকার বা সরকারি সংস্থাকে উপযুক্ত কারণ দেখানোর পরই এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে পঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গুজরাত, তামিলনাডুর উপকূল এবং রাজস্থানের সীমান্ত এলাকায় সরকারি সংস্থাকেও এই ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় না। কেবলমাত্র নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি এই ফোন ব্যবহার করতে পারে। এ রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন রয়েছে, যা কোনও বিপর্যয় পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়।
ওই কর্তার বক্তব্য, বিশেষ অনুমতি ছাড়া এ দেশে স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার উগ্রবাদী কার্যকলাপ হিসেবে দেখা হয়। তার জন্য ৪ বছর পর্যন্ত জেলও হয়ে পারে।
২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর ১৮৮৫ সালের ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইনে এ জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজকুমার সিংহ সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি লিখে, বেআইনি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধারের নির্দেশও দিয়েছিলেন। বিশ্বের সমস্ত ভারতীয় দূতাবাস সংশ্লিষ্ট দেশের পর্যটকদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ভারতে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণের কথা। সেই সঙ্গে ‘থুরায়া’ প্রযুক্তির স্যাট-ফোন ভারতে ব্যবহার সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
এই আইন ব্যবহার করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যান্ডি পোগ নামে এক ব্রিটিশ নাগরিককে রাজস্থানের পুষ্কর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রায় ১৫ দিন ধরে ফোনটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। তবে নিতান্তই অজ্ঞতাবশে ব্যবহারের জন্য আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন ওই ব্রিটিশ নাগরিক।
সেনা গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি মনে করছে, দার্জিলিংয়ে যে স্যাটেলাইট ফোনটির হদিশ মিলেছে সেটি থুরায়া প্রযুক্তির হতে পারে। মুম্বই হামলার সময় কসাব ও তার সঙ্গীরা এই ধরনের ফোনই ব্যবহার করেছিল। থুরায়া প্রযুক্তির স্যাট-ফোন ভারত-সহ ৯০টি দেশে ব্যবহৃত হত। মুম্বই হামলার পর এর ব্যবহার এ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। এই ধরনের ফোন বাজেয়াপ্ত হলেও কোনও তথ্য (কোথায় কথা হয়েছে, কতক্ষণ, কার সঙ্গে) জানা সম্ভব হয় না।
প্রতি বার ব্যবহারের পরই সেই সব ডেটা নষ্ট হয়ে যায়। নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির সন্দেহ, দার্জিলিং থেকে হয়তো এই ধরনেই থুরায়া স্যাট-ফোনই ব্যবহৃত হয়েছে।
কেন এই সন্দেহ?
কর্তারা জানাচ্ছেন, এ দেশে বৈধ স্যাটেলাইট ফোনের সংযোগ দিতে পারে একমাত্র টাটা কমিউনিকেশন লিমিটেড-টিসিএল (আগের ভিএসএনএল)। তাদের ল্যান্ড আর্থ স্টেশনটি রয়েছে পুণের কাছে দিঘিতে। ইন্টারন্যাশনাল ম্যারিটাইম স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশন (ইনমারস্যাট) বিশ্বে যাবতীয় উপগ্রহ যোগাযোগের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ভারতে টিসিএল-ই ইনমারস্যাটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ফোনের সংযোগ দিতে পারে। দার্জিলিংয়ে ফোনটি যখন ব্যবহার হচ্ছিল তখন টিসিএলের কাছ থেকে খোঁজ খবর করা হয়। দেখা যায় এটি বৈধ নয়। ফলে নিষিদ্ধ ফোনই ব্যবহার করা হচ্ছিল।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.