|
|
|
|
জ্যোতি-স্মরণে মুলায়মের ডাকে বার্তা পাচ্ছে বাম |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
তাঁর প্রিয় নেতার জন্ম শতবর্ষ পালনে উদ্যোগী হয়েছেন আর্যাবর্তের নেতাজি। সঙ্গে নিচ্ছেন প্রয়াত নেতার দলকে। আর তাতেই লোকসভা নির্বাচনের আগে গভীর তাৎপর্য দেখছে রাজনৈতিক শিবির!
সিপিএমের প্রয়াত নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের রেকর্ড সময়ের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রাক্-শতবর্ষে তাঁর স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চলেছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। প্রয়াত বসুর দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁদের যখন সুবিধা হবে, তখনই বসু-স্মরণ অনুষ্ঠান করতে তিনি তৈরি। বলাই বাহুল্য, লোকসভা ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সিপিএম নেতৃত্ব এমন প্রস্তাব দু’হাতে লুফে নিয়েছেন! প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের জন্য সিপিএমের নেতারা দিল্লিতে থাকবেন, এমন সময়েই মুলায়মদের বসু-স্মরণ হবে।
সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা মুলায়মের সঙ্গে প্রয়াত বসুর সম্পর্ক ছিল চির কালই গভীর। আপাতদৃষ্টিতে তাই প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতার শতবর্ষ পালনে মুলায়মের উদ্যোগে নিখাদ সৌজন্য আছে। কিন্তু তার অন্তরালেই রাজনৈতিক বার্তা খুঁজে পাচ্ছে বাম শিবির। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা, লোকসভা ভোট সময়ের আগেই হয়ে যাবে। দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে লাগাতার ধাক্কা খাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস লোকসভা এগিয়ে আনবে বলে ধরে নিয়ে প্রস্তুত থাকতে চাইছে বাম এবং সমাজবাদী, দুই শিবিরই। সিপিএম নেতৃত্বের আরও ধারণা, আগামী নভেম্বরে চার রাজ্যের ভোটের সময়েই লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। এই রকম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বসু-স্মরণে গিয়ে মুলায়ম আসলে অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি দলগুলিকে বার্তা দিতে চাইছেন বলে বামেদের ব্যাখ্যা। যদিও প্রকাশ কারাটেরা গত লোকসভা ভোটের আগে মায়াবতীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়েছিলেন! পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং কংগ্রেসকে যথেষ্ট কোণঠাসা অবস্থায় পেয়ে মুলায়মের প্রস্তাবকে তাঁরা খোলাখুলি স্বাগতই জানাচ্ছেন।
মুলায়মের তরফে ওই বসু-স্মরণের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে সিপিএমের অন্দরে জ্যোতিবাবুর শিষ্য বলে পরিচিত নেতাদের সঙ্গে। তাঁরা আবার বিষয়টি নিয়ে দলে এবং সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের কথায়, “কিছু প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের সুবিধা দেখে ওঁরা (মুলায়ম) অনুষ্ঠানটা করতে চান। কথা বলেই সেটা আমরা ঠিক করছি।” সমাজবাদী পার্টির একটি সূত্রের খবর, প্রথমে লখনউয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা হয়েছিল। পরে ঠিক হয়, লখনউয়ের চেয়ে দিল্লিতে অনেক সিপিএম নেতাকে একসঙ্গে পাওয়া সহজ। সেইমতোই কথাবার্তা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় আছে যে, কেন্দ্রীয় কমিটির এ বারের বৈঠকের জন্য সিপিএম নেতারা দিল্লিতে থাকার সময়ে চলতি সপ্তাহান্তেও রাজধানীতে বসু-স্মরণের আসর বসতে পারে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলছেন, “জ্যোতিবাবুর সঙ্গে মুলায়মের অসম্ভব ভাল সম্পর্ক ছিল। মুলায়ম যখন প্রথম বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, জ্যোতিবাবু গিয়েছিলেন। এখনও মুলায়ম সিংহ জ্যোতিবাবু বলতে অজ্ঞান!” বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার উদ্যোগের সময়েও মুলায়মের ভূমিকার কথা সিপিএমের অন্দরে চর্চায় আছে।
পশ্চিমবঙ্গে সমাজবাদী পার্টি এখনও বামফ্রন্টের শরিক। কিন্তু বসু-স্মরণের অনুষ্ঠানের জন্য সিপিএমের সঙ্গে যোগাযোগ সরাসরি মুলায়মের তরফেই করা হয়েছে। এমনকী, সমাজবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কিরণময় নন্দেরও বিষয়টি জানা নেই। যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে কিরণময়বাবু বলেছেন, “এখনও এই রকম অনুষ্ঠানের কথা জানি না।” আলিমুদ্দিনও বসুর জন্ম শতবর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। এই বছর জুলাইয়ে বসুর ৯৯তম জন্মদিন থেকে এক বছর ব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হওয়ার কথা। তার আগেই চলে এসেছে মুলায়মের প্রস্তাব। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “জাতীয় রাজনীতিতে ঘটনাবহুল পরিস্থিতি। তার মধ্যে পুরনো সেই দিনের কথা বলে পুরনো সখাদের দেখা হবে! জ্যোতিবাবু আমাদের সেতু।” |
|
|
|
|
|