|
|
|
|
চাপে পড়েও পাকিস্তানকে আক্রমণের প্রস্তুতি দিল্লির |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
সানাউল্লার মৃত্যুর ঘটনায় নিঃসন্দেহে মুখ পুড়েছে ভারতের। কিন্তু এই কোণঠাসা অবস্থাতেও প্রত্যাঘাতের সুযোগ সামনে। অস্ত্র, ভারত-পাক যৌথবিচার বিভাগীয় কমিটির টাটকা রিপোর্ট।
ভারতীয় জেলে পাক বন্দি সানাউল্লার মৃত্যু নিয়ে যখন স্বর চড়াচ্ছে ইসলামাবাদ, ঠিক তখনই পাল্টা অভিযোগ তোলার সুযোগ পেয়ে গেল সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত-পাক বিচারবিভাগীয় কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছর ধরে পাকিস্তানের তিনটি জেলে যে ৫৩৫ জন ভারতীয় বন্দি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪৬৯ জনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি (কনস্যুলার অ্যাকসেস) দেয়নি জারদারি সরকার। বলা হচ্ছে, পাক-জেলে ২৯ জন বন্দির সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সব চেয়ে মারাত্মক অভিযোগ, যে জেলে সর্বজিৎকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সেই কোট লাখপতে এখনও ২০ জন ভারতীয় বন্দি রয়েছেন, যাঁরা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। জেলের ভেতরে নির্যাতনই তাঁদের মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণ কিনা, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এই কমিটির পর্যবেক্ষণ পাকিস্তানের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তিকর কেন না, কমিটিতে পাকিস্তানের সদস্যও রয়েছেন।
ভারতীয় জেলে পাক বন্দি এবং পাকিস্তানের জেলে ভারতীয় বন্দিদের সঙ্গে যাতে কোনও ‘অমানবিক’ আচরণ না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে গড়া হয়েছিল এই যৌথ বিচারবিভাগীয় কমিটি। জেলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও অনুসন্ধান করার দায়িত্ব রয়েছে এই কমিটির। দু’দেশের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে এই কমিটি গড়া হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। এই সঙ্কটজনক সময়ে কমিটির এই রিপোর্ট নিঃসন্দেহে কূটনৈতিক ভাবে কিছুটা সুবিধা করে দেবে নয়াদিল্লির। সানাউল্লার মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি সাউথ ব্লক তথ্য দিয়ে জানাচ্ছে, পাকিস্তানে পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। গত জানুয়ারিতে কোট লাখপত জেলেই নিগ্রহের শিকার হন আর এক ভারতীয় বন্দি চামেল সিংহ।
বিচারবিভাগীয় কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে দু’টি দেশই নিজেদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে সেটি জমা দিয়েছে। রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে আসিফ আলি জারদারি এবং মনমোহন সিংহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কনস্যুলার অ্যাকসেস সংক্রান্ত চুক্তি সই করা হয় ঠিকই, কিন্তু তা মেনে চলার কোনও লক্ষণই আজ পর্যন্ত দেখায়নি পাক সরকার।
ঘটনাচক্রে যে দিন সর্বজিৎ লাহৌরের জেলে আক্রান্ত হন, সে দিনই পাক জেলগুলি পরিদর্শন শুরু করেছিল এই কমিটি। করাচিতে মালির, রাওয়ালপিন্ডিতে আদিয়ালা জেল হয়ে ২৮ তারিখ লাহৌরের কোট লাখপত জেলে এসে পৌঁছন কমিটির সদস্যরা। ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে প্রাক্তন বিচারপতি এম এস গিল এবং এম এ খান রয়েছেন এই কমিটিতে। তাঁরা জিন্না হাসপাতালে সর্বজিৎকে দেখতেও যান। তখন সর্বজিৎ গভীর কোমায় আচ্ছন্ন। সেটি ওই কমিটির ষষ্ঠ বৈঠক ছিল। জেল পরিদর্শনের পরে দেওয়া এক বিবৃতিতে সর্বজিতের ঘটনার নিন্দা করে বলা হয়, মোট ৫৩৫ জন ভারতীয় বন্দি (যার মধ্যে ৪৮৩ জন মৎস্যজীবী) পাকিস্তানের জেলে রয়েছেন।
কমিটি কড়া ভাষায় দু’দেশের সরকারকে জানিয়েছে, ২০০৮ এর চুক্তি যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কনস্যুলার অ্যাকসেস দেওয়ার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে দু’দেশকই। বন্দির অপরাধ, আদালতের আদেশ এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র এক দেশ অন্য দেশকে দেখাবে। গোটা প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করার কথাই বলা হয়েছে। সাজা শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই তাকে নিজের দেশে ফেরৎ পাঠানোর ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে। করাচির মালির জেলে ২৯ জন বন্দির সঙ্গে দেখা করেন এই প্রতিনিধিরা। প্রত্যেকেরই শাস্তির মেয়াদ এক মাসেরও বেশি শেষ হয়ে গিয়েছে। মে মাসের ১৭ তারিখের মধ্যে যাতে এঁদের ফেরৎ পাঠানো হয়, সে জন্য পাক সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। ওই একই সময়সীমার মধ্যে ৪৫৯ জন মৎস্যজীবী এবং ১০ জন অন্য বন্দির কনস্যুলার অ্যাকসেস মঞ্জুর করার কথাও ইসলামাবাদকে বলা হয়েছে।
|
|
|
|
|
|