স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে গণহত্যা, অপহরণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে জামাতে ইসলামির আরও এক শীর্ষ নেতা মহম্মদ কামরুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দিল ঢাকার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ত্রাস হিসেবে পরিচিত জামাতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের প্রাণদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুড়ে উল্লাস শুরু হয়। রবিবার রাতে পুলিশ মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার
|
মহম্মদ কামরুজ্জামান |
পরে মঙ্গলবার থেকে ফের অবস্থান শুরু হয়েছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। আজ সেখানে আন্দোলনের জয়ধ্বনি দেওয়া হয়। অন্য দিকে রায়ের প্রতিবাদে রবিবার ফের হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত। তার আগে আজ থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ ও নাশকতা শুরু হয়েছে।
একাত্তরে কামরুজ্জামান ছিলেন পাক-সহযোগী খুনে বাহিনী আল বদরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক গণহত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সব চেয়ে ভয়ানক ঘটনাটি ঘটে একাত্তরের ২৫ জুলাই। শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে হানা দেয় কামরুজ্জামানের বাহিনী। গ্রামের ১২০ জন পুরুষকে প্রথমে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি ও জবাই করে খুন করা হয়। তার পরে বাড়ি বাড়ি ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ করে আল বদরের দুষ্কৃতীরা। আদালত এই অপরাধের জন্যও এ দিন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। স্বাধীনতার পরে গা ঢাকা দেন কামরুজ্জামান। ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবর রহমান খুন হওয়ার পরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হয়। জামাতের নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন এই নেতাও। দলের মুখপত্রে লেখালেখিও শুরু করেন। পরে জামাতের প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েক বার ভোটে দাঁড়িয়েও জেতেননি।
ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসির মামুন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ৪২ বছর ধরে এই রায়ের অপেক্ষা করছিলেন। আজ তাঁরা শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন।” ঘাতক দালাল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির বলেন, “এই রায় অনেক দিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ। আল বদর যে সব ভয়ানক ঘটনা ঘটিয়েছে, তার নেতা হিসেবে কামরুজ্জামানকে দায়ী করেছে আদালত। এটা অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেও কার্যকরী হোক, মানুষ সেটাই চান। তা হলে, সেই সময়ে ঘটনাস্থলে না থাকার দোহাই দিয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ বন্ধ হবে।” শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেন, “রাস্তায় নেমে দেশের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা স্বাধীনতা-বিরোধী ঘাতকদের ফাঁসিই চান। কামরুজ্জামানের শাস্তিকে দেশের তরুণ প্রজন্ম স্বাগত জানাচ্ছে।” পাশাপাশি জামাতে ইসলামির মুখপাত্র রফিকুল ইসলাম এই রায় ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে বলেন, কামরুজ্জামানকে হত্যা করাই সরকারের লক্ষ্য। এর প্রতিবাদে রবিবার তাঁরা হরতাল ডেকেছেন।
|