আত্মঘাতী এজেন্টের স্ত্রীকে সাহায্য করছেন প্রতারিতরা
পাওনাদারদের চাপ বাড়ছিল ক’দিন ধরে। বছর বত্রিশের যুবক বলেছিলেন, জমিজমা বেচে অন্তত কিছু টাকা শোধ করবেন। তবে তার আগেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বসিরহাটের একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট মৃণালকান্তি মণ্ডল। পরিবারের দাবি, নিত্য দিনের অপমান সহ্য করতে পারছিলেন না মৃণালবাবু। তাঁর অবর্তমানে দুই মেয়েকে নিয়ে কার্যত পথে বসার জোগাড় হয়েছিল স্ত্রী-র। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন প্রতারিত আমানতকারীদেরই অনেকে।
আত্মঘাতী এজেন্ট
মৃণালকান্তি মণ্ডল
যদিও নিন্দুকেরা বলছেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে যাতে না পড়তে হয়, সে জন্যই এই উপায় ঠাওরছেন ওই আমানতকারীরা। হাকিম গাজি নিজে এক জন আমানতকারী। জানালেন, সব্জির ব্যবসার টাকা থেকে দিনে কুড়ি টাকা করে দিতেন মৃণালকে। হাজার কুড়ি টাকা জমেছিল। কিন্তু সারদা-কাণ্ডের পরে ‘সেলফ ট্রাস্ট এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ নামে লগ্নি সংস্থাটি হঠাৎই পাততাড়ি গোটানোয় সেই টাকা ফেরত পাওয়ার আশা এখন বিশ বাঁও জলে। কলকাতা থেকে ময়না-তদন্তের পরে পড়শি তথা ছোটবেলার বন্ধু মৃণালের দেহ আনতে গিয়েছিলেন হাকিম। অন্ত্যেষ্টির খরচ জুগিয়েছেন সাধ্যমতো। টেলিফোনে কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন। বললেন, “আমাদের তো দিন আনি দিন খাই দশা। মৃণালের অবস্থাও অন্য রকম ছিল না। কোথাও যেন মনে হচ্ছে, ওর মৃত্যুর সঙ্গে আমিও জড়িয়ে পড়লাম।”
প্রায় একই কথা রামপ্রসাদ সরকারের মুখে। তিনিও লগ্নি সংস্থাটিতে হাজার কুড়ি টাকা জমিয়েছিলেন মৃণালের মাধ্যমে। বললেন, “সীমান্তে লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজের পাশাপাশি লগ্নি সংস্থায় এজেন্টের কাজ নিয়েছিল মৃণাল। ওর দু’টো মেয়ে পড়াশোনা করে। সংসারটা কী করে চলবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।” গ্রামের মানুষ কিছু কিছু টাকা তুলে আপাতত মৃণালবাবুর অন্ত্যেষ্টির পর্ব মিটিয়েছেন। দু’চার দিনের দোকান-বাজার করার মতো টাকাও তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এটা যে স্থায়ী সমাধান নয়, তা জানেন সকলেই। মৃণালের স্ত্রী রূপালির জন্য সরকার চাকরির ব্যবস্থা করুক, এমনটাই দাবি প্রশান্ত মণ্ডল, স্বদেশ মণ্ডলদের।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বারোশো এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি টাকা তুলেছিল ওই লগ্নি সংস্থা। মৃণালবাবু নিজে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। রূপালি বললেন, “এখন অনেকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু উনি তো চলেই গেলেন।” মৃণালবাবুর ছোট মেয়ে দিশা সবে ভর্তি হয়েছে স্কুলে। বড় মেয়ে তিতির পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। সংগ্রামপুরের বকুলতলায় মাঝেরপাড়ার বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে তিতির বলে, “বাবা বলত, মানুষ হতে গেলে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু পড়াশোনাটাই যে এখন কী ভাবে করব, জানি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.