দু’বার সাধারণ সভা ডেকেও সিপিএম পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বাজেট পাশ করাতে পারেনি। ফলে, থমকে গিয়েছে জেলার ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের প্রায় ৫৬১ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। যদিও পরিস্থিতির দায় নিতে রাজি নয় কোনও দলই। বরং বাজেট পাশ না-হওয়া ও উন্নয়ন থমকে থাকার জন্য তারা একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতেই ব্যস্ত।
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের বাজেট পাশের জন্য গত ১৪ মার্চ এক বার ও দ্বিতীয় বার ২২ এপ্রিল সাধারণ সভা ডাকে ভোটাধিকারের বিচারে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে সংখ্যালঘু অবস্থায় থাকা বামফ্রন্ট। দু’টি সভাই বয়কট করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধীপক্ষকংগ্রেস ও তৃণমূল। দু’টি সভাতেই ‘কোরাম’ হয়নি। তাই বাজেটও পাশ হয়নি। থমকে রয়েছে রাস্তা ও নদীবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্গঠন, পানীয় জল, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন ও শিশুশিক্ষা-সহ বিভিন্ন প্রকল্প।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৬৩। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস দখল করে ৩১টি আসন। ৩২ আসন জিতে সি পি এমের পূর্ণিমা দাসকে সভাধিপতি এবং আর এস পি-র সিরাজুল ইসলামকে সহকারি সভাধিপতি নির্বাচিত করে জেলা পরিষদের বোর্ড দখল নেয় বামফ্রন্ট। ২০০৯-এ সিপিএমের টিকিটে জেতা জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম কংগ্রেস যোগ দেন। ওই সময়েই জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস অনাস্থা আনে। পঞ্চায়েত আইন অনুসারে অনাস্থা ও নুরুলের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়।
ইতিমধ্যে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস জেলায় ১৪টি আসন দখল করে। একটি আসন পায় তৃণমূল ও বাকি ৭টি আসন জেতে বামফ্রন্ট। যেহেতু বিধায়কেরাও জেলা পরিষদের সাধারণসভায় ভোট দেওয়ার অধিকারী সেই নিরিখে বামফ্রন্ট সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। কংগ্রেসের তিন জন জেলা পরিষদ সদস্য বিধায়ক হওয়ায় জেলা পরিষদের তিনটি আসন খালি হয়ে য়ায়। বছর দু’য়েক থেকে জেলাপরিষদের খালি আসনের সংখ্যা ৪। এখন জেলা পরিষদের বাজেট অধিবেশেনের সাধারণসভার মোট ১০৮টি ভোটের (সাংসদ, বিধায়ক ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে) মধ্যে কংগ্রেসের ৪৯টি, তৃণমূলের ভোট রয়েছে ১০টি ও বামফ্রন্টের রয়েছে ৪৯টি। কোরাম হতে গেলে সাধারণসভায় থাকতে হবে অন্তত ৫৪ জনকে।
জেলা সভাধিপতি সিপিএমের পূর্ণিমা দাসের অভিযোগ, “জেলার উন্নয়ন আটকে দিতে বিরোধীরা ওই সভা বয়কট করেন।” জেলা পরিষদে তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা বাণী ইসরায়েল বলেন, “২০১১ সালের বাজেট অবৈধ বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। তার পরেও অন্যায় ভাবে নতুন বাজেট পাশ করানোর জন্য ওই সভা ডাকা হয়। তাই আমরা বাজেট অধিবেশন বয়কট করেছি।”
জেলা পরিষদে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা আশিস তিওয়ারির বক্তব্য, “বাজেট পেশ করার আগে খসড়া বাজেটের জন্য সাধারণসভা করতে হয়। ওই সভা ডাকা হয় ৮ মার্চ। ওই দিন বিধানসভার অধিবেশন ছিল। আইন অনুসারে একই দিনে জেলা পরিষদের সাধারণসভা ডাকা যায় না। কারণ, অনেক বিধায়ক জেলা পরিষদের সাধারণসভার সদস্য। আমাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ওই দিন সাধারণসভা ডেকে খসড়া বাজেট তৈরি করা হয়। দ্বিতীয়ত, বছর দুয়েক ধরে জেলা পরিষদের চারটি শূন্য আসনে বাম সরকার বা তৃণমূল সরকার ভোট করল না। ওই দুই আগণতান্ত্রিকতার প্রতিবাদে বাজেট বৈঠক বয়কট করি।” সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “নুরুল ইসলামের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়া নিয়ে উভয় পক্ষ থেকে আদালতে মামলা ঝুলে থাকায় ওই আসনে বাম সারকারের আমলে ভোট করা যায়নি।” তাঁর সংযোজন, “২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর সেই সময়ের কংগ্রেস পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। তখন কিন্তু আমরা জেলার উন্নয়নের স্বার্থেই ২০০৬-৭ এবং ২০০৭-৮ অর্থবর্ষের জেলা পরিষদের বাজেট পাশে বাধা দিইনি। জেলা পরিষদের বিরোধীরাও তেমনই করবেন বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু তাঁরাই বাজেট পাশের সভা বয়কট করে উন্নয়ন আটকে দিলেন।” |