|
|
|
|
সবংয়ে প্রকট তৃণমূলের দ্বন্দ্ব |
নেতারাই তোলাবাজি করছেন, মমতাকে চিঠি দলের একাংশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সবং ও কলকাতা |
পশ্চিম মেদিনীপুরে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জেলার কিছু নেতার বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ ভূরিভূরি অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
ক’মাস আগে লালগড়ে গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির ‘অধিকার’ প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে আসে। ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে ইস্তফা দেন যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তন্ময় রায়। ক’দিন আগে ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি, তাঁর ছেলে অমিত এবং দলের ব্লক সভাপতি রতন দে-র বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে দলনেত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্তোষ কর।
তার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এল সবংয়ের কোন্দল। তোলাবাজি, জমি দখল, কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাঁত, এমনই নানা বিধ অভিযোগ উঠেছে ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রভাত মাইতি ও জেলা কোর কমিটির সদস্য অমূল্য মাইতির বিরুদ্ধে। অমূল্যবাবু সবং ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমানে সবং এলাকার জন্য দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত। অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, সিভিক পুলিশে নিয়োগ থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি সব ক্ষেত্রে তোলাবাজি করছে অমূল্যবাবু ও প্রভাতবাবুর দলবল। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের ঠিকাদারদের থেকেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। বর্গাদার উচ্ছেদ করে জমির দখল নেওয়া হচ্ছে। |
|
বিস্তারিত... |
তৃণমূলের সবং ব্লক কমিটির সহ-সভাপতি হরিসাধন ভট্টাচার্য, দুই সাধারণ সম্পাদক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও আবু কালাম বক্স, ব্লক কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণকিশোর ভৌমিক, অঞ্চল সভাপতি প্রভাত দে-র মতো অভিযোগকারীদের ক্ষোভ, প্রভাতবাবু এবং অমূল্যবাবুর আচরণ ও কাজকর্মে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ফলে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকে তৃণমূলের ভরাডুবি হতে পারে।
হরিসাধনবাবুর কথায়, “নেতাদের এই দুর্নীতি মেনে নিতে পারব না। অবিলম্বে অমূল্যবাবুকে সবংয়ের দায়িত্ব থেকে না সরালে ব্লকে দলের ভরাডুবি নিশ্চিত।” কৌশিকবাবু বলেন, “দলের দায়িত্বে থাকা নেতারাই দলকে চরম সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছেন।” আবু কালাম বক্সের আবার অভিযোগ, কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সরাসরি কেন দলনেত্রীর কাছে অভিযোগ?
অভিযোগকারীদের দাবি, আগে ব্লক ও জেলা নেতৃত্বকে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন। লাভ হয়নি। মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতাদের বলেও সমস্যা মেটেনি। তাই এ বার তাঁরা তৃণমূল নেত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর বক্তব্য, “আমি ওঁদের দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।” আর মুকুলবাবু বলেন, “এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দলেই আলোচনা হবে।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, “যে কোনও স্তরের নেতা-কর্মীই সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখা হবে।”
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই দুই নেতা অবশ্য সব অভিযোগই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। প্রভাতবাবু বলেন, “১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি। কারও কাছ থেকে এক কাপ চা খেয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিক।”
আর অমূল্যবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাঁত আমাদের নয়। এমন আঁতাঁত রয়েছে অভিযোগকারীদেরই। মানস ভুঁইয়ারও কারসাজি রয়েছে এর পিছনে।” কংগ্রেস বিধায়ক মানসবাবু অবশ্য বলেন, “সব রাজনৈতিক নেতারাই সবংয়ের উন্নয়ন নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তবে তৃণমূল নেতারা দিনে আমার নামে কত বার গালমন্দ করেন, তা-ও সকলের জানা।”
দলীয়-কোন্দলের বিষয়টিতে আদৌ গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “বর্তমান ব্লক কমিটি সবংয়ে সংগঠনের কাজে অনেকটাই উন্নতি করেছে বলে আমার জানা আছে।” |
|
|
|
|
|