কুইজ শো-র নাম ‘ট্যাক্স ইওর ব্রেন’। প্রযোজক ভারতীয় আয়কর দফতর। সর্বভারতীয় ইংরেজি চ্যানেলের জন্য তৈরি সেই কুইজ শো-তে অংশ নিচ্ছে ভারতের বাছাই করা কিছু স্কুল। বুধবারও সারা দিন তার শু্যটিং চলল নয়াদিল্লির নয়ডা ফিল্ম সিটিতে। ‘দাদাগিরি’-র মতোই এখানেও কুইজমাস্টার দাদা। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ভ্যানিটি ভ্যান থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তাঁর প্রাক্তন দলের আইপিএল বিদায় নিয়ে। |
শাহরুখ কি বাড়িয়ে দেবেন হাত? |
প্রশ্ন: কেকেআর তো মোটামুটি ‘আউট’ হয়ে গেল।
সৌরভ: হুঁ।
প্র: হুঁ কী। কেন এমন হল বলুন? গত বারের চ্যাম্পিয়নরা এ ভাবে বিদায় নেবে ভাবাই তো যায় না!
সৌরভ: স্পোর্টসে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। গত বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলেই এ বার দারুণ খেলবে, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। আইপিএল যে টাইপের টুর্নামেন্ট, খেলাগুলো প্রায় গায়ে গায়ে পড়ে। আজ খেলা। কাল সক্কালে উঠে ট্র্যাভেল। আবার পরশু খেলা। প্রবলেম হল, একটা বাজে ফর্মের চক্করে পড়লে সেটা থেকে বার হওয়ার সময়ই পাওয়া যায় না। কেকেআরের এ বার ঠিক তাই হল। টি টোয়েন্টিতে ভাল খেলতে হলে মোমেন্টাম মাস্ট। কেকেআরের সেই মোমেন্টামটাই তৈরি হল না।
প্র: ব্যাটিং খারাপ হল আগাগোড়া।
সৌরভ: সে তো হল-ই। সবচেয়ে যেটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল সুনীল নারিন নির্ভরতার অঙ্কটা এ বার আর কাজ করল না। সবাই ধরে ফেলল।
প্র: একটু ব্যাখ্যা করুন।
সৌরভ: নারিনই বলতে গেলে গত বার কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করে ছিল। কী কী সব ম্যাচ ও বার করেছে!
প্র: সব ম্যাচ নারিন কোথায়? চেন্নাই তো ফাইনালে প্রচণ্ড ঠেঙিয়ে দিল নারিনকে।
সৌরভ: ফাইনালটা একমাত্র বাদ রাখুন। বাকি সব ম্যাচ নারিন ওয়াজ দ্য ফ্যাক্টর। অপোনেন্ট ওকেই সবচেয়ে সমীহ করেছে। পরের পর ম্যাচ নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে ও কেকেআরকে জিতিয়ে দিয়েছে। এ বার নারিন টপ ছ’টা বোলারের মধ্যেই নেই। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে ওকে অন্য টিমগুলো ধরে ফেলেছে। আর নারিন ধরা পড়ে গেলে কেকেআরের জেতা মুশকিল।
প্র: কিন্তু ইউসুফ পাঠান তো আরও বড় হতাশা। আপনি কেকেআর ক্যাপ্টেন হলে পাঠানকে টানা খেলিয়ে যেতেন?
সৌরভ: বলা মুশকিল। আমি কী করতাম নিজেও জানি না। ইউসুফের স্ট্রং পয়েন্টটাও আসলে অপোনেন্ট ধরে ফেলেছে। কেউ আর ওকে সামনে বল করে না। তবে ইন্ডিয়ান প্লেয়ারের অপশন যেহেতু কম ছিল গম্ভীরের কাছে। দুম করে বাদ দেওয়াটাও কঠিন।
প্র: কালিস?
সৌরভ: আমায় ছেড়ে দিন না। কেকেআর নিয়ে আমি বেশি কিছু বলতেই চাই না।
প্র: গম্ভীরের সাজানো ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ছিল?
সৌরভ: উফ, আবার।
প্র: আচ্ছা গম্ভীর সম্পর্কে বলুন।
সৌরভ: গম্ভীর ক্যাপ্টেন হিসেবে সব মিলিয়ে আমি খারাপ বলব না। তিনটে সিজন ওর আন্ডারে কেকেআর খেলল। এক বার সেমিফাইনাল। এক বার চ্যাম্পিয়ন। এ বার ততটা ভাল নয়। আমি একেবারে দুরছাই করব না।
প্র: গম্ভীরের ব্যাটিং?
সৌরভ: গম্ভীর একে তো আউট অব ফর্ম ছিল। তার পর এ বার ওর মানসিকতাটাও অন্য রকম ছিল। দু’টো ফর্ম্যাটেই ইন্ডিয়ান টিমের বাইরে চলে গিয়েছে। গত বার ও অনেক নিশ্চিন্ত ছিল। অনেক মেন্টালি রিল্যাক্সড থেকে ব্যাটটা করেছে। ‘ফ্রেম অব মাইন্ড’ এমন একটা জিনিস যেটা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট। টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে বিরাট তফাত করে দেয়।
প্র: মনোজ তিওয়ারিকে যে পনেরো জনেই রাখা হয়নি। ওয়াংখেড়েতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত?
সৌরভ: আমি কী করে বলব। কেকেআর অন্দরমহলের ব্যাপার।
প্র: আচ্ছা শাহরুখ যে এখন আপনার আমলের মতো এত টিমের কাছে থাকেন না। ক্রিকেটারদের এসএমএস-টেস পাঠান না এটা কি ভাল? না, আগের সিস্টেমটাই ভাল ছিল?
সৌরভ: শাহরুখ আর টিমের ব্যাপার। আমার কোনও বক্তব্য নেই।
প্র: শাহরুখের ওয়াংখেড়েতে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা?
সৌরভ: আমার কোনও বক্তব্য নেই।
প্র: সামনের বছর খোলা নিলাম। কেকেআরের কাকে কাকে ধরে রাখা উচিত? কাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?
সৌরভ: ওরে বাবা, এ সবের মধ্যে আমায় কেন নিয়ে যাচ্ছেন। কেকেআরের ব্যাপার।
প্র: এ ভাবে উত্তর দিতে শুরু করলে শিগগিরই লোকে ভাববে এ কি সৌরভ না সৌরভের ডামি?
সৌরভ: (হাঃ হাঃ) আমি কী করব। প্রশ্নগুলো কী ভাবুন। আমি ঢুকলেই...।
প্র: আচ্ছা এটুকু তো বলুন, কেকেআরের কী ভাবে নকশা করা উচিত আগামী মরসুমের জন্য?
সৌরভ: প্রথম কাজ হওয়া উচিত, ইডেন উইকেটটা বদলানো। আরও ভাল উইকেটে খেলার ব্যবস্থা করা উচিত। তাতে অ্যাওয়ে ম্যাচে সুবিধে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের আউট অব ফর্ম ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিক আউট অব ফর্ম থাকবে না। আউট অব ফর্মে টার্নিং উইকেট খুব ক্ষতিকারক। কনফিডেন্স আরও নষ্ট করে দেয়। গম্ভীর-পাঠানদের যা হল। হার্ড উইকেট হলে ওরা থ্রু দ্য লাইন অনেক বেটার মারতে পারত। ইডেনে রান পেয়ে বাইরের মাঠে ওদের কনফিডেন্সও অনেক বেশি থাকত। টি টোয়েন্টি মারার খেলা। মারতে না পারলে কিছু হবে না।
প্র: কিন্তু ইডেনে মে মাসে কি হার্ড উইকেট বানানো সম্ভব?
সৌরভ: নিশ্চয়ই সম্ভব। ঘাস ছাড়লে কেন সম্ভব নয়।
প্র: আচ্ছা, কেকেআরের এ বারের বিপর্যয় দেখে কখনও নিজের সময়ের কথা মনে পড়ছিল?
সৌরভ: ওহ্ আবার! নিজের সময়? নাহ...আমার কেকেআরের সময় অনেক পিছনে চলে গ্যাছে।
প্র: এই যে কুইজ শো আপনি স্কুলছাত্রদের নিয়ে করছেন, তারাও তো মাঝে মাঝে সেলিব্রিটি কুইজমাস্টারকে প্রশ্ন করে, নাকি?
সৌরভ: হুঁ।
প্র: মনে করা যাক তেমনই একটা বাচ্চা ছেলে ইনোসেন্টলি আপনাকে প্রশ্ন করল। জবাব দিতে হবে তো?
সৌরভ: হ্যাঁ।
প্র: সে মনে করুন জিজ্ঞেস করল, টিমের এই হাল দেখে শাহরুখ আপনাকে পরের বছর কেকেআর উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দিলেন। রাজি হবেন?
সৌরভ: ইনোসেন্ট?
প্র: বলুন না।
সৌরভ: কথা বলতে আমার কোনও আপত্তি নেই। ভেবে দেখতেই পারি।
প্র: এ বারের পুণে?
সৌরভ: ওরে বাবা। আজকের মতো কেকেআর যথেষ্ট হয়েছে। |