|
|
|
|
অনাদরে পড়ে রবীন্দ্র নামাঙ্কিত সভাগৃহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রায় সত্তর বছর আগে মেদিনীপুরে তৈরি হয়েছিল ‘রবীন্দ্র নিলয়’। অদূরেই ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির’। এই ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করতে এসেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। সেটা ১৯৩৯ সাল। কবিগুরুর এই মেদিনীপুর সফরকে স্মরণীয় করে রাখতেই বছর ষাটেক আগে তৈরি হয়েছিল ‘রবীন্দ্র নিলয়’। এই সভাঘরই এখন সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। বেশি বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। মঞ্চও বহু পুরনো। সভাঘর সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে মানছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, অর্থের অভাবেই কাজ এগোচ্ছে না।
রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল এই সভাঘর। সমিতির বর্তমান সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দাস বলছিলেন, “সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি সভাঘরটাকে বাঁচানোর। তবে, অর্থের অভাবে অনেক কাজই করতে পারছি না।” তাঁর কথায়, “বেসরকারি সাহায্য ছাড়াও এমন কাজে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদনও জানাচ্ছি।”
মেদিনীপুর শহরের যে ক’টি সভাঘরে বছরভর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, তারমধ্যে রবীন্দ্র নিলয় অন্যতম। ভাড়া বাবদ যে টাকা আয় হয়, তা দিয়েই ভবনের দেখভাল করা হয়। সংস্কৃতি চর্চার প্রসারে এক সময় শহরে আরও বড় একটি সভাঘর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়েছিল তার নাম দেওয়া হবে ‘রবীন্দ্র ভবন’। এ জন্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তবে কাজ এগোয়নি। প্রস্তাবিত ভবনেই আর্ট গ্যালারি তৈরির কথা। শহরে এমন গ্যালারি একটিও নেই। ওই ভবন তৈরি হলে তা শহরের একটি ‘সম্পদ’ হয়ে থাকবে বলেই মনে করেন শিল্পী মহল। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির অবশ্য আশ্বাস, “জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কথা হয়েছে তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সঙ্গেও। দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।” |
|
মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্র নিলয়। —নিজস্ব চিত্র। |
গ্রামে-গঞ্জে সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ঘটাতে এক সময় জেলার বিভিন্ন ব্লকে সভাগৃহ তৈরির তোড়জোড় হয়েছিল। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ও পিংলায় রবীন্দ্র নামাঙ্কিত সভাঘর তৈরি হয়েছে। কেশিয়াড়ির সভাঘরের নাম ‘রবীন্দ্র ভবন’। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। আর পিংলার সভাঘরের নাম ‘রবীন্দ্র সদন’। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২ কোটি টাকা। এখানে বেশিরভাগ সরকারি অনুষ্ঠানই হয়। কেশিয়াড়ির সভাঘরে যেমন মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেচ ও জলপথ দফতরের মেলা ও প্রদর্শনী। কেশিয়াড়ি ও আশপাশে কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থাও আছে। তবে তারা এই সভাঘর ভাড়া নিতে পারে না। সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয় না। কোনও বেসরকারি সংস্থা এই সভাঘর ভাড়া নিলে দিনে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। সরকারি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভাড়া ১ হাজার টাকা। কেশিয়াড়ির বিডিও অসীম নিয়োগী বলেন, “সংস্কৃতি চর্চার প্রসারে সভাঘর হয়েছে। মাঝেমধ্যে নানা অনুষ্ঠান হয়। তবে ইচ্ছে থাকলেও সকলে এই সভাঘর ভাড়া নিতে পারে না। অন্যত্র অনুষ্ঠান করে।”
পিংলার সভাঘরটি চালু হয়েছে। তবে কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনুষ্ঠান হলে চেয়ার ভাড়া করতে হয়। আপাতত সভাঘরের ভাড়া তাই দিনে দেড় হাজার টাকা। কাজ মিটলে ভাড়া বাড়বে। কেন এমন অবস্থা? পিংলার বিডিও সুতপা নস্কর বলেন, “যে ওই সংস্থা কাজ করছে, তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করছি। দ্রুত যাতে কাজ শেষের চেষ্টা চলছে। এখন অনুষ্ঠান হলে উদ্যোক্তাদের একটু সমস্যা হয়। তবে কাজ শেষ হলে আর সমস্যা হবে না।” |
|
|
|
|
|