হাতি করিডর থেকে সরে গেল গ্রাম
হাতিদের চলার পথ পরিষ্কার করে দিতে একটা আস্ত গ্রাম অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রাজা। এ কোনও প্রাচীনকালের আখ্যান নয়। একবিংশ শতাব্দীর ঘটনা। ভারত সরকার-অসম সরকার মিলেও যা করতে পারেনি, কার্বি-রাজা তাই করলেন। হাতি-করিডর বন্ধ করে বসতি গড়ার বদভ্যাস যখন ক্রমেই রাজ্য তথা দেশের প্রচলিত রীতি হয়ে উঠেছে, তখনই কার্বি আংলং-এর রাম টেরং গ্রামটি গোটা দেশের কাছেই ব্যতিক্রমী উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল। পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে হাতির স্বার্থরক্ষায় গোটা গ্রামের স্থানবদলের নজির আর নেই।
রাজ্যের বৃহত্তম জেলা কার্বি আংলং। অসমের কার্বি উপজাতির বাস এখানে। ১০, ৪৩৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলার প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়েই জঙ্গল-পাহাড়। তবে এক দিকে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি জঙ্গি সংগঠনের উৎপাত, অন্য দিকে জনবৃদ্ধির চাপে ক্রমেই কোণঠাসা জঙ্গল। সেই সঙ্গে রবার ও চা-চাষ বাড়ার ফলেও হাতির বসতিতে টান পড়ছে। যেখানে-সেখানে তৈরি হচ্ছে গ্রাম। এমনই একটি গ্রাম, রাম টেরং। ১৪০০ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি গ্রামটি কালাপাহাড়-দৈগ্রুং ‘হাতি করিডরের’ উপরে তৈরি হয়। কাজিরাঙা থেকে নামবর অরণ্য অবধি যাওয়ার জন্য প্রায় ২০০০ হাতি ও অন্যান্য প্রাণী এই পথই ব্যবহার করত।
নতুন গ্রামের পত্তন করছেন কার্বি রাজা। ছবি ডব্লিউটিআই-এর সৌজন্যে।
‘ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ এই এলাকায় দীর্ঘদিন হাতি-মানুষ সংঘাত নিয়ে কাজ করছে। সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানান, অন্য প্রাণী যদিও বা বাধা এলে অন্য পথ ব্যবহার করে, হাতি কিন্তু সে ক্ষেত্রে একগুঁয়ে। তারা বছরের পর বছর, এমন কী বংশানুক্রমে একই পথ ব্যবহার করে। পথে বাধা এলে তা সরিয়ে দিয়ে এগোনর চেষ্টা করে তারা। ফলে হাতির পায়ে মানুষের মৃত্যু আর মানুষের হাতে হাতি-নিধন দুই-ই চলতে থাকে। রাম টেরং গ্রামের গ্রামবাসীরা পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে আছেন। তাঁদের পাট্টাও রয়েছে। তাই তাঁরাও এলাকা ছাড়তে রাজি ছিলেন না।
ডব্লিউটিআই-এর তরফে এই এলাকায় হাতি-মানুষ সংঘাত নিয়ে কাজ করছেন দিলীপ দেউড়ি। তিনি জানান, দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে হাতি করিডরকে জায়গা দিতে কিছু বাড়ি স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু, পুরো গ্রামটিই হাতি চলাচলের পথে থাকায় গোটা গ্রাম না সরিয়ে উপায় ছিল না। বন বিভাগ, ডব্লিউটিআই ও কার্বি আংলং স্বশাসিত পরিষদের কর্তারা কার্বি আংলং-এর চল্লিশতম রাজা রেচো হারসিং রোংহাং-এর শরণ নেন। রাজা বোঝেন, প্রজারা রাজি না হলে হাতি ও মানুষের লড়াই থামানো যাবে না। তাই তিনি গোটা গ্রামকে রাজি করান। রাজাদেশ শিরোধার্য করে গোটা গ্রামের সব পরিবার বর্তমান এলাকা থেকে আড়াই কিমি দূরে সরতে রাজি হয়েছেন। ডব্লিউটিআই, এলিফ্যান্ট ফ্যামিলি, আইইউসিএন ও জাপান টাইগার এলিফান্ট ফান্ডের অর্থসাহায্যে এই নতুন গ্রামটি ‘আদর্শ কার্বি গ্রাম’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পরে এই গ্রাম ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠতে পারে।
ডব্লিউটিআইয়ের তরফে রথীন বর্মন জানান, গত কাল, মঙ্গলবার রাজা নিজে নতুন গ্রামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রজা ও সৈন্যবাহিনী ঢাল-তলোয়ারসহ রাজাকে অনুসরণ করেন। রাজার কথায়, “হাজার বছর ধরে কার্বিরা অরণ্য ও পশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন। এ বার পশুর প্রয়োজনে নিজের বাস্তুভিটে ও সংকীর্ণ স্বার্থত্যাগ করে আমরা গোটা দেশের সামনে নজির কায়েম করতে চলেছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.