কুবের উবাচ
• রঞ্জিত্ রায় (৩১)

• সরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী • পিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং পেনশন রয়েছে • থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে
• নিজেদের বাড়ি • জুলাই মাসে বিয়ে • বেতন কম হওয়ায় সংসার চালানো নিয়ে চিন্তিত
• সঞ্চয়ও সামান্য • ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা তৈরিতে আগ্রহী

মাসে নিট আয়
১৬,০০০
টাকা রাখেন (বছরে)
• পিএফ ১১,০০০
• পিপিএফ ৬,০০০
• রেকারিং ডিপোজিট ৫০০ (২০২২-র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, পাবেন ১,০৪,২৬৩ টাকা)
• এলআইসি জীবন মিত্র ৩০,৩৬০(২৭ বছরের, বিমা মূল্য ৬,০০,০০০)
• ন্যাশনাল পেনশন স্কিম ১৯,২৬০
খরচ (মাসে)
• সংসারে দেন ৩,০০০
• নিজের খরচ ১,০০০
• স্বাস্থ্য বিমা ৫৫৭
সম্পদ
• রেকারিং ডিপোজিট
৫৩,০০০ (মেয়াদ শেষ, বিয়েতে খরচ হবে)
• রেকারিং ডিপোজিট ৪,০০০
(২০১৩-র মে পর্যন্ত, পাবেন ১,০৬,২৯৪ টাকা,
যার পুরোটাই বিয়ের খরচ হিসেবে সঞ্চিত)

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
জুলাই মাসেই বিয়ে। অর্থাত্ এ বার আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার পালা। সচ্ছল জীবন যাপন করতে তাই প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করে এগোতে চান রঞ্জিত্। যার প্রাথমিক কাজটা শুরুও করে দিয়েছেন। প্রথমেই বলতে চাই তাঁর রেকারিং ডিপোজিট খোলার কথা। যা খুবই প্রশংসনীয়। তবে সামনে রঞ্জিতের আরও অনেক খরচ।
বর্তমানে তিনি ৩,০০০ টাকা সংসার খরচ দেন। বিয়ের পর তা অন্তত ৫০% বাড়বে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে কমপক্ষে ৪,৫০০ টাকা দিতে হবে। তাই সে ভাবেই হিসাব করে দেখে নিই তাঁর প্রয়োজন মিটবে কী ভাবে।

স্বাস্থ্য বিমা

রঞ্জিতের স্বাস্থ্য বিমা নেই। তাই বিয়ের পর তাঁর প্রথম কাজ নিজের ও স্ত্রীর জন্য স্বাস্থ্য বিমা করা। ৩ লক্ষ টাকার বিমা করলে, খরচ মাসে প্রায় ৫৬৭ টাকা। কম বয়সে এই বিমা করালে বেশি সুরক্ষা মেলে। প্রিমিয়ামও কম।

জীবন বিমা

রঞ্জিত্ সবে জীবন মিত্র নামে একটি বিমা করেছেন। এই এনডাওমেন্ট পলিসিটিতে বোনাসের সুবিধা রয়েছে। তবে ২৭ বছরের বিমার কভারেজ মাত্র ৬ লক্ষ টাকা। গত কয়েক বছরে বিমা সংস্থাগুলির খরচ এবং বোনাসের ইতিহাস দেখে বলতে পারি, তাঁর এই বিমার বদলে ৩০ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি করলে ভাল হত। যার প্রিমিয়াম দিয়ে বাকি টাকা পিপিএফ, রেকারিং বা ঋণপত্র নির্ভর কোনও প্রকল্পে রাখতে পারতেন। ব্যাঙ্ককর্মী হওয়ায় তিনি রেকারিং ডিপোজিটে ১% বেশি সুদ পেতেন। সুদ কমার জমানায় ঋণপত্রের বাজারও ভালই চলছে। তাই সে ক্ষেত্রেও সুবিধা হত।
কিন্তু এখন এ নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই। বরং এখন ২৯ বছরের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি করে নিতে পারেন। ইন্টারনেট মারফত এই বিমা করলে প্রিমিয়াম মাসে প্রায় ৩০০ টাকা। আর সাধারণ ভাবে করলে প্রায় ৬৫০ টাকা। সব সময়েই ইন্টারনেটে বিমা করার খরচ কম। তবে এই সুযোগে সবাইকে আমি একটা কথা বলব। জীবন বিমা মানে জীবনের সুরক্ষা। তাই সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে এখানে লগ্নি না-করাই ভাল।

পিপিএফ

রঞ্জিতের পিপিএফে লগ্নি খুবই কম। মাসে ৫০০ টাকা। আমার মতে এই খাতে মাসে কমপক্ষে ২,০০০ টাকা রাখুন। একটি পিপিএফ প্রকল্প ১৫ বছরের। তার পর তা ৫ বছর বাড়ানো যায়। এর পুরো লগ্নি এবং রিটার্নে কর ছাড় মেলে। তাই প্রথম দিকে বেশি টাকা জমা রাখলে ভাল রিটার্নের সুবিধা রয়েছে। সুযোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই খাতে লগ্নি বাড়ান।
এই সব খাতে লগ্নির পরও হাতে থাকবে ৪,৬০০ টাকা। আসুন দেখে নিই সেই টাকা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন তিনি
১) নিজের ব্যাঙ্কে প্রতি মাসে ১,৬০০ টাকার রেকারিং ডিপোজিট খুলুন। যার মেয়াদ হবে ১ বছর। এ ভাবে কম মেয়াদে রেকারিং করার কারণ সংসারে টাকার জোগান বজায় রাখা। এই টাকা ভবিষ্যতে সন্তানের জন্ম, বেড়াতে যাওয়া বা আপত্‌কালীন অবস্থার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
২) গোল্ড সেভিংস ফান্ড বা ইটিএফ প্রকল্পে প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা করে রাখুন। তবে অবশ্যই সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে। যাতে সোনার দামের ওঠা-পড়াও আপনাকে ততটা ঝুঁকির মুখে না-ফেলতে পারে। কারণ অনেকেই মনে করেন যে সোনার দাম ক্রমশ বাড়তে থাকবে, কখনওই কমবে না। তাঁদের এই আশায় ইন্ধন জুগিয়েছে গত দু’বছরে আকাশছোঁয়া সোনার দাম। ফলে বহু লগ্নিকারীই বেশি বেশি সোনা কিনেছেন। যদিও আমার বরাবরের বিশ্বাস যে শেয়ার বা পণ্য বাজারের মতো সোনার দামেও উত্থান-পতন আছে। এপ্রিলে যার প্রমাণ পেয়েওছি। কমোডিটি বা পণ্য বাজারে সোনার দাম পড়েছে। খোলা বাজারেও পড়েছে প্রায় ১২%। তাই এটা সোনা কেনার উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে এক বছর তা চালিয়ে পরের বছর ভেবে দেখা যেতে পারে।
৩) ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে মাসে এসআইপি পদ্ধতিতে ১,৫০০ টাকা করে লগ্নি শুরু করুন। তবে দু’টি আলাদা ফান্ডে। চাইলে আপনি একটিতে ৫০০ ও অন্যটিতে ১,০০০ টাকা রাখতে পারেন। অথবা দু’টিতে ৭৫০ টাকা করে লগ্নি করতে পারেন। তবে এসআইপি-র জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। হাতে সময় নিয়েই এখানে টাকা রাখুন। মাঝে মাঝে আপনার লগ্নি করা ফান্ডের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখুন। তাতে ভবিষ্যতে তা চালাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকবে।
শেয়ার বাজারও কিছুটা অস্থির। আমার ধারণা সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন থাকায় আগামী কয়েক মাসে অস্থিরতা আরও কিছুটা বাড়তে দেখা যাবে। কিন্তু এসআইপি মারফত লগ্নি করলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, শেয়ার বাজার নামলে বরং আপনি কম দামে ইউনিট কেনার সুযোগ পাবেন। আর বাজার উঠলে আপনার ঝুলিতে মুনাফা আসবে বেশি। অনেক লগ্নিকারীই মনে করেন, মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে ইউনিট কিনলে ততটা লাভ হয় না। বাজারে অনেক সংস্থাই দৈনিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এসআইপি করে। চাইলে তার কথাও ভেবে দেখুন।

অবসর পরিকল্পনা
রঞ্জিতের পিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং পেনশন রয়েছে। যার সাহায্যে তিনি অবসরের জন্য সঞ্চয় করতে পারবেন।
এর সঙ্গেই বেতন বাড়লে রেকারিং, স্থায়ী আমানত বা এসআইপি-র মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারবেন।

করছাড়ের পরিকল্পনা
পিএফ, পিপিএফ, স্বাস্থ্য বিমা, জীবন বিমার সাহায্যে তিনি করছাড়ের সুবিধা পাবেন। আয় বাড়লে কিন্তু তাঁকে এই সব খাতে লগ্নি বাড়িয়ে করছাড়ের আরও সুবিধা নিতে হবে।
রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিমে লগ্নি করলে কর ছাড় পাবেন। এখানে প্রথম বার শেয়ার বাজারে পা রাখা লগ্নিকারীরা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ২৫,০০০ টাকার উপর কর ছাড় পেতে পারবেন।
আশা করি এই পরিকল্পনা আগামী দিনে রঞ্জিত্‌কে দিশা দেখাতে পারবে। তাঁর বিবাহিত জীবনের জন্যও রইল আগাম শুভেচ্ছা।

(প্রেরকের অনুরোধে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.