আমেরিকায় আবার বর্ণবিদ্বেষের শিকার শিখরা। রবিবার সকালে গুরুদ্বার থেকে ফিরছিলেন অশীতিপর পিয়ারা সিংহ। আচমকাই লোহার রড নিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক জন। অচৈতন্য অবস্থায় এখনও হাসপাতালে ভর্তি ওই বৃদ্ধ। পাশাপাশি জর্জিয়ার এক স্কুলে পাগড়ি পরে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হত এক পড়ুয়াকে। মার্কিন বিচার বিভাগে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে স্কুল যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়নি, তার সমালোচনাও করেছে তারা।
ক্যালিফোর্নিয়ার একেবারে কেন্দ্রস্থলে ফ্রেসনো। সেখানকার গুরুদ্বারের স্বেচ্ছাসেবক পিয়ারা সিংহ। মারধরের চোটে তাঁর হাড়, পাঁজর গুঁড়িয়ে গিয়েছে। কম করে ২০টা সেলাই পড়েছে শরীরে। তিন দিন পরও ফেরেনি জ্ঞান। ফ্রেসনোর পুলিশ প্রধান জেরি ডায়ার জানান, অভিযুক্ত গিলবার্ট গার্সিয়া ধরা পড়েছে। বর্ণবিদ্বেষের ফলেই সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই এলাকায় শিখদের সংখ্যা খুব বেশি। তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না এই আশ্বাস দিতে রবিবার বিকেলেই যান প্রশাসনিক কর্তারা। |
এক বছর আগে এ রকম ভাবেই আক্রান্ত হয়েছিল উইসকনসিনের ওক ক্রিক গুরুদ্বার। ৫ অগস্ট সকালবেলা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করেন এক মার্কিন বর্ণবিদ্বেষী। তার পর ফের এই ধরনের হামলায় রীতিমতো ত্রস্ত আমেরিকায় বসবাসকারী শিখরা। পাগড়ির জন্য সহজেই চিহ্নিত করা যায় বলে বেছে বেছে শিখদেরই নিশানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। তবে শুধু শিখ সম্প্রদায়ই নয়, রবিবারের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে মুসলিম মানবাধিকার সংগঠনও।
এই পাগড়ি নিয়েই যত গোল বেধেছিল জর্জিয়ার স্কুলে। ধর্ম বিশ্বাসের জন্য ‘সন্ত্রাসবাদী’-র খোঁটাও শুনতে হয়েছে ওই পড়ুয়াকে। নানায় কথায় উত্যক্ত করা তো চলতই, মাঝে মাঝে গায়েও হাত তুলত সহপাঠীরা। এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ার পর মার্কিন বিচার বিভাগ তদন্তে নেমে দেখে, এ রকম হয়রানি ঠেকানোর কোনও ব্যবস্থাই নেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমনকী, সাক্ষীর বক্তব্যও গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি তাঁরা। মিডল ও হাইস্কুলের ছাত্রদের এই মনোভাব দূর করতে এ বার থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিখদের উপর আক্রমণের এই পরিস্থিতির মধ্যেই তাঁদের দাবিদাওয়া যাতে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া যায় তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন মার্কিন কংগ্রেসের এক মাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য অমি বেরা।
শিখদের মানবাধিকার রক্ষার্থে কিছু দিন আগে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে। তাতে যোগ দিলেন অমি বেরা। এই সংগঠনের অনেকেই খলিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে অমি জানান, “কেউ বর্ণবিদ্বেষী কাজ করলে যাতে কড়া শাস্তি দেওয়া যায়, আমি সেই চেষ্টাই করব” |