রুদ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছে তিন দুষ্কৃতী। পিছনে পুলিশ। মাঝে-মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে গুলি ছুড়ছে দুষ্কৃতীরা। তার পরে আবার দৌড়।
বাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে রাস্তায় হঠাৎ এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে উঠেছিলেন কাটোয়ার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকেই। শেষ পর্যন্ত সেখানকার মাঠপাড়ায় একটি বাড়ির শৌচাগার থেকে এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন কাটোয়া থানার এসআই সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। আড়াল থেকে তাঁকে লক্ষ করেও গুলি চালিয়েছিল নাসিম শেখ নামে ওই দুষ্কৃতী। পিছু না হটে তাকে পাকড়াও করেন সুদীপ্তবাবু। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, ধৃতের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, ছ’রাউন্ড কার্তুজ ও প্রায় ২২ কিলোগ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নাসিম আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকার দুষ্কৃতী। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অপরাধের মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, নাসিমের শ্বশুরবাড়ি মাঠপাড়া এলাকায়। সেই সূত্রে সে কয়েক মাস আগে আসানসোল থেকে পালিয়ে এসে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়। একটি মুদি দোকান খুলে ব্যবসাও শুরু করে।
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে কাটোয়া থানার এসআই সুদীপ্তবাবুর নেতৃত্বে দু’টি মোটরবাইকে চড়ে চার জন পুলিশকর্মী মাঠপাড়ার তিলমাথা মোড়ে পৌঁছয়। একটি বাড়িতে নাসিম রয়েছে খবর পেয়ে সেখানে ঢোকে পুলিশ। আর তখনই আরও দুই সঙ্গীকে নিয়ে দৌড়তে শুরু করে নাসিম। ধাওয়া করেন পুলিশকর্মীরা।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, কিছুটা দূর যাওয়ার পরে পাড়ার মধ্যে একটি গলিতে ঢুকে পড়ে নাসিম। অন্য দু’জন ফাঁকা জমি ধরে পালাতে থাকে। সেই সময়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। কিন্তু ওই দুই দুষ্কৃতী পগারপার। তাদের আর খোঁজ পায়নি পুলিশ।
নাসিম শেখকে তাড়া করেন এসআই সুদীপ্তবাবু নিজে। গলি ধরে দৌড়তে দৌড়তে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে নাসিম। আশ্রয় নেয় একটি অস্থায়ী শৌচাগারে। ওই বাড়ির এক সদস্যের কথায়, “বাড়ির কাজ সারছিলাম। হঠাৎ ওই দুষ্কৃতী এসে ঢোকায় ভয়ে সিঁটিয়ে যাই। তার পরেই এক পুলিশ অফিসার বাড়িতে ঢোকে। কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে তিনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। আর তখনই বাথরুম থেকে গুলি ছোড়া হয়। তা সত্ত্বেও ওই পুলিশ অফিসার সেখানে গিয়ে ওই দুষ্কৃতীকে ধরেন।”
এর আগেও কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙায় অপরাধীদের ধরতে গিয়ে প্রহৃত হন সুদীপ্তবাবু ও আরও দুই পুলিশকর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন সুদীপ্তবাবু তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী একেবারে কাছ থেকে তাঁর দিকে গুলি চালিয়েছিল। কিন্তু হাত কেঁপে যাওয়ায় গুলি তাঁর গায়ে লাগেনি। তবে তার পরেও নাসিমকে ধরে আনতে ভুল করেননি তিনি।
কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের সঙ্গে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের একটি গণ্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশের প্রশ্রয়েই ওই সব দুষ্কৃতীদের এত বাড়াবাড়ি। তার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে।” |