রবীন্দ্রভবন একটা আছে ঠিকই, তবে শহরের একেবারে প্রান্তে। যানবাহনের অভাবে যেখান থেকে অনুষ্ঠান দেখে ফিরে আসা রীতিমতো কষ্টকর। তাছাড়া অপর্যাপ্ত আলো, পাখা, দেওয়ালে ফাটল, ছাদে চিড় এসব তো রয়েইছে। এমন অবস্থা খোদ বধর্মান শহরের রবীন্দ্রভবনের। ফলে রবীন্দ্রজয়ন্তী এবং অন্য অনুষ্ঠানেও ভিড় কমছে রবীন্দ্রভবনে। শহরের এক নামী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বলেন, “প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রভবনে গান গাইতে যাই। কিন্তু দর্শক আসনের দিকে চোখ রাখতে পারিনা। শূন্য চেয়ারগুলি যেন ব্যঙ্গ করে।”
শহরের শিল্পী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেরই মত, রবীন্দ্রভবনের বদ্ধ হলঘরে বসে অনুষ্ঠান শোনা সত্যিই কষ্টকর। তাঁদের অভিযোগ, ঘরে পর্যাপ্ত আলো, ফ্যান নেই, বাথরুমটিও মান্ধাতা আমলের। এছাড়া ৯ বছর আগে দু’টি বাতানুকুল যন্ত্র বসানো হয়েছিল, তবে বসানোর কিছুদিন পরেই তা চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্মৃতিকাতর শহরবাসীর আক্ষেপ, রবীন্দ্রভবনের সুদিনে ২৫ বৈশাখ, ২২ শ্রাবন যেন মেলা বসে যেত। কলকাতা থেকে আসতেন নামী সাহিত্যিক, কবিরা। চলত আলোচনাচক্র, কবিতা পাঠের আসর। |
হলের বাইরে বিক্রি হতে লিটিল ম্যাগাজিন। অনেকটাই যেন কোলকাতার জোড়াসাঁকো বা রবীন্দ্রসদনের বাইরের দৃশ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মিলিয়ে গিয়েছে। রবীন্দ্র পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য আশিস বিশ্বাস বলেন, “সারা বছরই আমরা রবীন্দ্রনাথ-সহ নানা মনীষীর জন্মদিন, প্রয়াণ দিবস পালন করি। কিন্তু আয় বলতে মাঝেমধ্যে রবীন্দ্রভবন ভাড়া ও জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে দেওয়া অফিস ভাড়া। এ দিয়ে ৯ কর্মীর বেতন মেটানোই সম্ভব হয় না তো সংস্কার কীভাবে হবে।”
কয়েক বছর আগে বর্ধমান রবীন্দ্রভবনের সামনে বিশ্বকবির পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসাতে অর্থ সাহায্য করেছিলেন নাট্যকর্মী গোপা চৌধুরী। নাহলে অছি পরিষদ কবে তা করে উঠতে পারত ঠিক নেই।
তবে রবীন্দ্রভবনের সুদিন ফিরতে পারে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন আশিসবাবু। তিনি জানান, এই ভবন সংস্কারে বর্ধমানের (দক্ষিণ) বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় নিজের তহবিল থেকে দিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা। তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে মঞ্জুর হয়েছে আরও ৭৫ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বর্ধমান রবীন্দ্রভবনের আধুনিকীকরণ করা হবে। বদলে ফেলা হবে আলো ও শব্দের ব্যবস্থা। গোটা হলটিকেই করা হবে বাতানুকুল। তবে টাকা কতদিনে মিলবে তা বলতে পারেননি তিনি।
অভাব অভিযোগ কাটিয়ে উঠতে না পেরে ইতিমধ্যে অবশ্য রাজ্য সরকারের কাছে ওই প্রেক্ষাগৃহ অধিগ্রহনের জন্য আবেদন করে বসে রয়েছে রবীন্দ্রভবনের অছি পরিষদ। রবীন্দ্রপরিষদের সম্পাদক স্বাতী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ আমরা হয়তো জাঁকজমক করে উঠতে পারিনা। তবে যাঁরা আজও আসেন, প্রত্যেকেই আসেন প্রানের টানে। আমরা সকলের জন্যই দরজা খোলা রেখেছি। ইচ্ছে করলেই কবি-সাহিত্যিকেরা এইখানে এসে আসর বসাতে পারেন। তবে সেটা তাঁদের করতে হবে সম্পূর্ন নিজেদের প্রচেষ্টায়।” |