লগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারির পরে চলে যাচ্ছে একটার পরে একটা জীবন। আত্মঘাতীদের মধ্যে সারদার এজেন্ট-আমানতকারীরা যেমন আছেন, রয়েছেন অন্য লগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্তেরা এবং তাঁদের স্বজন।
সোমবার বসিরহাটের সংগ্রামপুরে কীটনাশক খেয়ে মারা যান মৃণালকান্তি মণ্ডল (৩২) নামে এক লগ্নি সংস্থার এজেন্ট। ওই দিনই রায়দিঘিতে শঙ্কর কাঁসারি (৪৬) নামে লগ্নি সংস্থার আর এক এজেন্ট আত্মহত্যা করেছেন। গত কয়েক দিনে এমন মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১১।
আরও কিছু অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় লগ্নি সংস্থায় বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ জড়িয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে ওই ঘটনাগুলি ঘটেছে, তা তদন্ত-সাপেক্ষ।
দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ স্টেশনের কাছে পাওয়া যায় রবীনচন্দ্র মাহাতো নামে সারদার এক আমানতকারীর দেহ। সারদায় আমানতকারী বারুইপুরের ঊর্মিলা প্রামাণিক, জয়নগরের রঞ্জিত প্রামাণিক আত্মহত্যা করেন। দুর্গাপুরে সারদার এজেন্ট যাদব মাজি, ফলতার বাসিন্দা সারদা-এজেন্ট দিলীপ মণ্ডল, ফরাক্কার বাসিন্দা সারদা-এজেন্ট প্রবোধ সিংহ আত্মহত্যা করেন। রামনগরের লগ্নি সংস্থার মালিক তথা হোটেল ব্যবসায়ী অজিত শীলের ঝুলন্ত দেহ মেলে হোটেলেই। সালারে দুই লগ্নি সংস্থার এজেন্ট প্রতিমা দাস গলায় দড়ি দেন। সোদপুরের নাটাগড়ে আমানতকারীদের হাতে অপমানিত হয়ে আত্মঘাতী হন অ্যানেক্স সংস্থার এক এজেন্টের বাবা জগদীশ রায়। |
মৃণালকান্তি মন্ডলের। শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র। |
বসিরহাটের বকুলতলার বাসিন্দা মৃণাল যে লগ্নি সংস্থার এজেন্ট তাদের একটি শপিংমল ছিল। সেটি দেখিয়েই তারা লগ্নি তুলত। গত মার্চ মাসে হঠাৎই সংস্থাটি অফিস বন্ধ করে দেয়। মৃণালবাবুর স্ত্রী রূপালি বলেন, “আমানতকারীরা বেশিরভাগই গরিব। ওকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিল। এখন টাকা ফেরত চাইছিল।”
রায়দিঘির পশ্চিম জটাকাঁসারিপাড়ার বাসিন্দা শঙ্কর টাওয়ার ইনফোটেক নামে একটি লগ্নি সংস্থায় এজেন্টের কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে জয়নগর বাজারে টাওয়ার ইনফোটেকের স্থানীয় অফিস বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, বাড়ির সামনের মাঠে ঝোপের ধারে একটি জামগাছে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় শঙ্করবাবুর ঝুলন্ত দেহ মেলে। স্ত্রী পুতুল বলেন, “স্বামী নিজেও টাকা রেখেছিলেন ওই সংস্থায়। সারদা গোষ্ঠী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উনি মনমরা ছিলেন।” তবে তাঁর সংযোজন, “স্বামীর বিবাহবর্হিভূত সর্ম্পক ছিল। তা নিয়েও বাড়িতে অশান্তি হত।”
মঙ্গলবার আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়ি থেকে এক লগ্নি সংস্থার মালিক ইন্দ্রজিৎ রায় (৫০) ওরফে গৌতমের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। আত্মীয়দের দাবি, ঘটনার পিছনে পারিবারিক কারণও থাকতে পারে।
এ দিকে, চুঁচুড়ায় লগ্নি সংস্থার কর্ণধার জয়ন্ত সরকারকে খুনের অভিযোগে বিপ্লব বিশ্বাস নামে সংস্থার এক এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, সোদপুরের নাটাগড়ে অ্যানেক্সের এজেন্ট বিধান রায়ের বাবা জগদীশ রায়কে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত তিন মহিলাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সংস্থা লালবাতি জ্বালিয়েছে বুঝেই তাঁরা বারবার বিধানের বাড়িতে হানা দিতেন।
আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি লগ্নি সংস্থার মালিকের বিরুদ্ধে এ দিন সন্ধ্যায় বাগুইআটি এবং নিউটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এজেন্ট-আমানতকারীরা। অভিযোগ, বাগুইআটি এলাকার চিনার পার্কের ওই সংস্থা কয়েক মাস আগে বন্ধ হয়। সংস্থার কর্তা শান্তাপ্রসাদ গোলদার সারদা-কাণ্ডের পরে আচমকাই গা-ঢাকা দেন। ওই সংস্থায় ২০-২৫ হাজার আমানতকারী প্রায় ১৭ কোটি টাকা রেখেছিলেন। এরই মধ্যে নিরাপত্তা রক্ষীদের বকেয়া ২৫ হাজার টাকা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মালদহের ইংরেজবাজারে সারদা গোষ্ঠীর একটি দফতর সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
|