অভিযুক্ত তিন এজেন্ট
লগ্নি সংস্থার কর্ণধারকে শ্বাসরোধ করে খুন
বার খুন।
মিটিং করতে রবিবার গভীর রাতে চুঁচুড়ায় এক লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের বাড়িতে ঢুকে গলায় তার পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠল তিন এজেন্টের বিরুদ্ধে।
জয়ন্ত সরকার
সারদা-বিপর্যয়ের জেরে ইতিমধ্যেই রাজ্যে বেশ কিছু এজেন্ট-আমানতকারীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও খুন এই প্রথম। নিহতের নাম জয়ন্ত সরকার (৪৮)। বাড়ি চুঁচুড়ার বিশালাক্ষীতলায়। কলকাতার মানিকতলায় ‘হ্যালো ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে বছর চারেক ধরে তিনি একটি লগ্নি সংস্থা চালাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী পাপিয়াদেবী পুলিশের কাছে বিপ্লব দাস, অভিজিৎ সাহা এবং আব্দুল রশিদ নামে তিন এজেন্টের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম জন নদিয়ার জাগুলিয়ার বাসিন্দা। বাকি দু’জন কোচবিহারের দিনহাটা এবং হ্যামিলটন এলাকায় থাকেন।
হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটা খুনের ঘটনাই। নিহতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তেরা পলাতক। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না। ঘটনাটির সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন জয়ন্ত সরকারের আত্মীয়স্বজনরা।— নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিদিনের মতো সংস্থার কাজ সেরে রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন জয়ন্তবাবু। স্ত্রীকে ওই রাতেই এজেন্টদের সঙ্গে বাড়িতে মিটিংয়ের কথা জানিয়েছিলেন। খাওয়া সেরে তিনি ছাদের ঘরে চলে যান। রাত দেড়টা নাগাদ বিপ্লব, অভিজিৎ এবং আব্দুল রশিদ গাড়িতে এসে সোজা জয়ন্তবাবুর সঙ্গে কথা বলতে ওই ঘরে যান। পাপিয়াদেবী তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া মেয়ে সৃজিতাকে নিয়ে এক তলার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই বাড়িরই অন্য একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন জয়ন্তবাবুর বাবা সুনীল সরকার।
পাপিয়াদেবী পুলিশকে জানান, রাত তিনটে নাগাদ বিপ্লব তাঁকে ঘর থেকে ডেকে বলেন, ‘বৌদি বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিন। দাদা উপরে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আজ আর মিটিং করলাম না। কাল হবে’। তিন জনে গাড়িতে উঠে চলে যায়। ওই রাতে পাপিয়াদেবী আর উপরে ওঠেননি। সোমবার সকালে স্বামীকে চা দিতে গিয়ে তিনি দেখেন, ছাদে তাঁর স্বামী দু’পা মুড়ে দেওয়াল ঘেঁষে বসে রয়েছেন। মাথার উপরের রড থেকে সরু তার তাঁর গলায় পেঁচানো। সেই তার নেমেছে চিলকোঠার ছাদের একটি রড থেকে। পাপিয়াদেবীর কান্না এবং চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে আসেন। আসে পুলিশ।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা কাণ্ডের পরে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য জয়ন্তবাবুর উপরে আমানতকারীদের চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। উত্তর ২৪ পরগনায় গুমা এলাকায় জয়ন্তবাবু তাঁর পোশাক তৈরির কারখানা বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। আমানতকারীদের টাকা ফেরতের আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
কিন্তু এজেন্টরা তাঁকে খুন করবে কেন? তাতে তো টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে যাবে!
পাপিয়াদেবী বলেন, “স্বামী কারও টাকা মারার লোক ছিলেন না। আমার স্থির বিশ্বাস, স্বামীকে বিপ্লববাবুরাই খুন করেছে। তিন জনের মধ্যে বিপ্লববাবুকেই চিনতাম। স্বামী মিটিংয়ের কথা বলেছিল। তাই অত রাতে দরজা খুলে দিই।” কিন্তু কেন বিপ্লবদের বিরুদ্ধে তিনি খুনের অভিযোগ তুলছেন? পাপিয়াদেবীর দাবি, “এজেন্টদের একাংশ আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলে স্বামীকে দিতেন না। বিপ্লববাবুরাও ওই দলে থাকতে পারে। স্বামী সেই টাকা চাওয়ার জন্যই তাঁকে খুন করা হল।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গা থেকে জয়ন্তবাবুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ, সেই দেওয়ালে শুকনো রক্তের দাগ। জয়ন্তবাবুর বাবা বলেন, “রাতে কোনও চেঁচামেচি শুনিনি। তবে যে তার দিয়ে ছেলেকে খুন করা হয়েছে, সেটা বাড়ির নয়। হত্যাকারীরা নিয়ে এসেছিল।”
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জয়ন্তবাবু এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর দাদা, ওই এলাকারই বাসিন্দা অলোক সরকারও বলেন, “ও আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওর এই পরিণতি ভাবতেই পারছি না।” ময়না-তদন্তের পরে বিকেলেই জয়ন্তবাবুর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.