টাকা গায়েবের অভিযোগ মালিকদের
জাল ছড়াচ্ছে ভুয়ো মোবাইল টাওয়ার সংস্থা
যেন আর এক ধরনের ‘সারদা’ কাণ্ড।
কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের কলকাতা অফিসে একাধিক ভুয়ো মোবাইল টাওয়ার সংস্থার বিরুদ্ধে ১৭ লক্ষ টাকারও বেশি জালিয়াতির অভিযোগ জমা পড়েছে। দফতরের কর্তাদের দাবি, এই জালিয়াতির ঘটনাও যেটুকু জনসমক্ষে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। প্রতারিত মানুষের সংখ্যা ও টাকার অঙ্কটা আসলে বহু গুণ বেশি।
কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের বক্তব্য, সরকার স্বীকৃত মোবাইল টাওয়ার সংস্থার নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আলোচনার মাধ্যমে টাওয়ার বসানোর শর্ত ঠিক করে বাড়ি বা জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। তার পর সরকারি ছাড়পত্র পেলে টাওয়ার বসানো হয়। বিনিময়ে চুক্তিমতো প্রতি মাসে ভাড়া পান জমি বা বাড়ির মালিক। কিন্তু কর বা অন্যান্য খরচ বাবদ মালিককে আগাম কোনও অর্থ দিতে হয় না। অথচ ওই ভুয়ো মোবাইল টাওয়ার সংস্থাগুলি টাওয়ার বসানোর আগে জমি-বাড়ির মালিকদের কাছে কর দিতে হবে বলে বিপুল অঙ্কের টাকা আগাম চাইছে। কখনও চাকরির টোপও দিচ্ছে। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরে টাওয়ার বসানো তো দূরস্থান, সংস্থারই আর হদিস মিলছে না। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি কিছু প্রতারকের মাধ্যমেই সারা দেশে ওই সব ভুয়ো সংস্থা জাল ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি আবার স্বীকৃত টাওয়ার সংস্থার নাম বা লোগো সামান্য বদল করে আস্থা কুড়োতে চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ।
পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের জালিয়াতি চক্র বিস্তারের খবর মিলেছে। সম্প্রতি তা প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজারেও। কলকাতায় টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং (টার্ম) সেল-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অতনু ঘোষ জানিয়েছেন, খবর প্রকাশের পর ৩৬ জন জমি-বাড়ির মালিক তাঁদের কাছে এই ভুয়ো ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন মোট ১৭ লক্ষ ২১ হাজার টাকারও বেশি জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। আরও দু’জন অভিযোগ জানালেও টাকার অঙ্ক জানাননি। তিনি বলেন, “আমাদের আশঙ্কা, জালিয়াতির অঙ্কটা আসলে বহু গুণ বেশি।”
অতনুবাবু জানান, এক মাসে মোট যে ক’টি অভিযোগ আসবে, তার বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে জানানো হবে। তবে প্রতারিত ব্যক্তিদেরও আলাদা করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। গত বছর ইন্ডাস টাওয়ার্স নামে একটি স্বীকৃত সংস্থাও এ ধরনের ভুয়ো সংস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বিজ্ঞাপন দেয়।
কী ভাবে জাল বিস্তার করছে এই চক্র? বিভিন্ন অভিযোগ থেকেই এটা স্পষ্ট করা যাবে। যেমন, টার্ম সেলে-র কাছে অভিযোগ জানান বীরভূমের বাসিন্দা নবকুমার পাল। তাঁর ছেলে দেবাশিসবাবু বলেন, পরিচিত ব্যক্তি মাসে সাত হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে দুই সংস্থার টাওয়ার বসানোর নামে দু’বছর আগে তাঁদের কাছ থেকে কিস্তিতে মোট ২.৩০ লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু এখনও টাকাও মেলেনি। বনগাঁর বাসিন্দা গোপালচন্দ্র দে-র ছেলে উত্তমবাবু জানান, হায়দরাবাদের একটি টাওয়ার সংস্থা তাদের টাওয়ার বসালে এককালীন ২৫ লক্ষ টাকা ও মাসে ৬৫ হাজার টাকা ভাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে বিভিন্ন কর দেওয়ার জন্য কিস্তিতে তাঁরা সংস্থার দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকারও বেশি জমা দিয়েছেন। কিন্তু সংস্থার সঙ্গে আর ফোনে যোগাযোগই করা যাচ্ছে না।
দেড় বছর আগে আসানসোলের বীরেন লোহারও পরিচিত ব্যক্তিকে একই কারণে এক লক্ষ টাকা দেন। প্রস্তাব ছিল মাসে ১৮ হাজার টাকা ভাড়া এবং সঙ্গে দু’জনের চাকরির (বেতন ছ’হাজার টাকা)। সবই এখন স্বপ্ন। সোদপুরের বাসিন্দা তিমিরবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাই সমীরবাবু জানান, দাদার পরিচিত এক যুবক এই ব্যবসার কথা বলেছিল। সেই সূত্রেই তাঁদের পরিচিত বেশ কয়েক জন ওই যুবককে মোট সাড়ে তিন লক্ষ টাকারও বেশি দেন। তিন লক্ষ টাকা ওই যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হলেও বাকিটা মেলেনি।
কেন তাঁরা এই ফাঁদে পা দিলেন? নিশ্চিত আয়ের পথ খুলবে ভেবেই টাকা দিয়েছিলেন। টার্ম সেলের কর্তাদের দাবি, মোবাইল টাওয়ার সংস্থা ও টাওয়ার বসানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আমজনতার মধ্যে সচেতনতা কম। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় ওই চক্র। এ নিয়ে তাঁরা সচেতনতা কর্মসূচি নেবেন বলে জানালেও টেলিকম দফতরের কর্তাদের আর্জি, টাকা দেওয়ার আগে সংস্থা সম্পর্কে ভাল করে খোঁজখবর নিন। প্রয়োজনে তাঁরা টার্ম সেলের দফতরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা স্বীকৃত কি না তা যাচাই করুন। না হলে পরে এ ভাবেই পস্তাতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.