তৃণমূল সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল তথ্যটি। সেই তথ্য নিয়েই এখন অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।
কেন? পুস্তিকায় সরকারের সাফল্য বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছিল, লগ্নি সংস্থার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের ১৫০ জন অফিসার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১১ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অডিটোরিয়ামে ওই প্রশিক্ষণ হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ওই প্রশিক্ষণে তাঁদের নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল বিভাগ, সেবি ও কোম্পানি বিষয়ক আধিকারিকরা ছিলেন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক পদস্থ অফিসার জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, প্রশিক্ষণ পাওয়া অফিসারেরা রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা, ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে সচেতনতা বাড়াবেন। কী করে বেআইনি লগ্নি সংস্থাকে চিহ্নিত করা যাবে, তা-ও মানুষকে জানিয়ে দেবেন তাঁরা। অভিযোগ, সেই কাজটি আর করেনি সরকার।
ওই প্রশিক্ষণ নেওয়া অফিসারদের এক জন বলেন, “যে ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল তাতে আমাদের কাছে বিষয়টি জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। কী ভাবে এই সব লোকঠকানো সংস্থাকে চিহ্নিত করা যাবে, কী আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবেসবই বোঝানো হয়। ওই প্রশিক্ষণের পরে কাজে নেমে পড়লে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে বাঁচানো যেত।” প্রশিক্ষণ নেওয়া আর এক অফিসার বলেন, “এ যেন প্রশিক্ষণ নেওয়া পুলিশ-কুকুরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা মতো ঘটনা! রাজ্যে লগ্নি সংস্থার বেআইনি ব্যবসা জাঁকিয়ে বসার খবর পেয়েও তাই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে আমাদের।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, লগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ২০১১ সালের অগস্টে রাজ্য সরকারের ক্রেতাসুরক্ষা দফতর তাদের চিঠি দেন। ওই সব সংস্থা কী ভাবে মানুষকে ঠকায়, কোন কোন কাগজপত্র ওই সব সংস্থার কাছে থাকা উচিত, কী ভাবে তাদের ধরতে হবে--এ সব জানতেই ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে। ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের ওই আবেদনে সাড়া দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। মহাকরণ সূত্রের খবর, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চিফ জেনারেল ম্যানেজার পি কে জেনা ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেকে জানান, আমানতকারীদের সুবিধার্থে তাঁরা ওই ধরনের বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির করতে প্রস্তুত। ওই বছরের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অডিটোরিয়ামে প্রশিক্ষণ শিবিরটি হয়।
এই প্রশিক্ষণকে সরকারের সাফল্য বলে তুলে ধরতেও কসুর করেনি রাজ্য। তৃণমূল সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকায় তা ছাপাও হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমানতকারীদের বাঁচাতে ওই অফিসারদের কোনও কাজেই লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ।
কেন এ রকম একটি প্রশিক্ষিত দলকে কাজে লাগালো না সরকার?
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক পদস্থ অফিসার জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসারেরা রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা, ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে সচেতনতা বাড়াবে। কী ভাবে বেআইনি লগ্নি সংস্থাকে চিহ্নিত করা যাবে, তা-ও মানুষকে জানিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই কাজটি আর করেনি সরকার। না করার পিছনে কোনও কারণ ছিল বলে মনে করেন ওই অফিসার। তবে তা কী তা খোলসা করে বলতে চাননি তিনি।
একই প্রশ্নে মুখ বন্ধ রেখেছেন রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও। তিনি বলেন, “লগ্নি সংস্থাগুলোর বাড়বাড়ন্ত রুখতে দিল্লিকে একাধিক চিঠি দিয়েছি। জবাব মেলেনি।” তাঁর দফতরের অফিসারদের প্রশিক্ষণের পরেও কেন কাজে লাগানো হয়নি, জানতে চাইলে মন্ত্রীর জবাব, “এ বিষয়ে কিছু বলব না।”
|