পাওয়া গেল টাকার হিসেব
সারদায় আমানতকারী কত, অথৈ জলে পুলিশ
সারদা রিয়েলটিতে ঠিক কত সংখ্যক আমানতকারী টাকা রেখেছেন, তার হিসাব পেতে কালঘাম ছুটছে পুলিশের। তবে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে বাজার থেকে সারদার তোলা টাকা ও তাদের খরচ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন এবং অন্যান্য কর্তা ও কর্মীদের জেরা করে এজেন্টদের সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আমানতকারীর সংখ্যা সম্পর্কে সারদার বিভিন্ন অফিস থেকে নির্দিষ্ট তথ্য এখনও জোগাড় করতে পারেননি তদন্তকারীরা। ফলে শ্যামল সেন কমিশনে কোনও আমানতকারী টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করলে তা সারদার নথি ঘেঁটে যাচাই করার সুযোগ অনেক ক্ষেত্রেই থাকছে না বলেই তদন্তকারীদের বক্তব্য।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, টাকা দাবি করতে আসা প্রতিটি আমানতকারীর পরিচয় এবং নথিপত্র যাচাই করতে হবে। নকল ‘ডিপোজিট সার্টিফিকেট’ দাখিল করে কেউ যাতে টাকা ফেরতের দাবি না করতে পারেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ফলে সরকার ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গড়লেও আসল আমানতকারীদের খুঁজে বের করে তাঁদের টাকা মেটানোই এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টাকা উঠেছে ২,১০০ কোটি
• এজেন্টদের কমিশন ৫৫০ কোটি
• আসল ও সুদ ফেরত ৮০০ কোটি
• খয়রাতি, সংস্থার খরচ ৪০০ কোটি
• খোঁজ পাওয়া যায়নি ৪০০ কোটি
রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার জানিয়েছেন, সারদার সম্পত্তির খোঁজ করা এবং তা বিক্রি করে টাকা জোগাড় করাটাই এখন তদন্তকারী দলের প্রধান কাজ। কারণ, সরকার আমানতকারীদের টাকা ফেরানোকেই সব চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, আমানতকারীদের সঠিক সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
কেন এই সমস্যা?
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, মূলত “কোম্পানি ডিপোজিট” সংগ্রহ করেই বাজার থেকে টাকা তুলেছে সারদা। কিন্তু তার জন্য কোনও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মানা হয়নি। কোনও নামী সংস্থার “কোম্পানি ডিপোজিট” কিনলে একটি সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। সেই ডিপোজিটের তথ্য সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সংশ্লিষ্ট সংস্থার হিসাব পরীক্ষক এবং সংস্থার কাছে লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে কোনও ‘ডিপোজিট সার্টিফিকেট’ নিয়ে সন্দেহ হলে অন্তত চারটি সংস্থা থেকে তা যাচাই করার সুযোগ থাকে।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, সারদার ক্ষেত্রে এ সবের কোনও তোয়াক্কাই করা হয়নি। তারা সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ফাঁকি দিয়েই টাকা তুলেছে। গত তিন বছর সংস্থার কোনও অডিট হয়নি। ফলে হিসাব পরীক্ষকের কাছেও তার কোনও তথ্য নেই। একই সঙ্গে সারদার নিজস্ব হিসাবেও কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। দেখা যাচ্ছে, আমানতকারীদের যাবতীয় তথ্য সারদার বিভিন্ন শাখাগুলি থেকেই রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। ডামাডোল শুরু হওয়ার পর তার অনেকটাই লোপাট হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে এক মাত্র ভরসা ছিল সংস্থার সফটওয়্যারে থাকা তথ্যপঞ্জি।
কিন্তু সুদীপ্তবাবু নিজেই সিবিআইকে চিঠি লিখে ওই সফটওয়্যারে জালিয়াতি করার অভিযোগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সংস্থার এক শ্রেণির কর্মী ‘সাফারি সফটওয়্যার’-এ ভুয়ো নাম তুলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বহু ভুয়ো নাম এখনও রয়ে গিয়েছে। পুলিশ প্রথমে এই তত্ত্ব বিশ্বাস না করলেও পরে দেখা যায়, সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও চালু থাকা সফটওয়্যারে প্রায় ১ হাজার নতুন নাম উঠেছে। তার পর থেকেই তদন্তকারী অফিসাররা মনে করছেন, আমানতকারীদের সঠিক সংখ্যা পাওয়াটা বেশ মুশকিল। কারণ, বিভিন্ন শাখার এজেন্টরাই এর নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁরা হাজার হাজার ভুয়ো ‘এন্ট্রি’ করে থাকতে পারেন বলে মনে করেছেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু পুলিশ কী আমানতকারীদের টাকার পুরোটা উদ্ধার করতে পারবে?
মঙ্গলবার জেরায় সুদীপ্তবাবু ও দেবযানী জানান, ২০০৮ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারদা ২১০০ কোটি টাকা তুলেছিল। তার মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ হয় এজেন্টদের কমিশন দিতে গিয়ে। আমানতকারীদের ৮০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ৪০০ কোটি খরচ হয় রাজনৈতিক খয়রাতি, সংস্থার কর্মীদের বেতন এবং সংস্থা চালানোর জন্য। অবশিষ্ট ৪০০ কোটি কোথায় খরচ হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে কিছু সম্পত্তি কেনার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন জেরার সময়ে সুদীপ্তবাবু কেঁদে ফেলেন। জেরায় হাজির ছিলেন সংস্থার আর্থিক দফতরের কয়েক জন কর্মী। সুদীপ্তবাবু তাঁদের দেখিয়ে বলেন, “এঁরা সবই জানেন।” কর্মীদের বলেন, “আমাকে এ বার থেকে সুদীপ্ত বলেই ডেকো।”
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, এজেন্টদের কমিশন, সংস্থা চালানো বা রাজনৈতিক খয়রাতিতে বেরিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়। সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেলে তা বিক্রি করা হবে। তা বিক্রি করা হবে। সেই সঙ্গে যোগ হবে সরকারের ৫০০ কোটির তহবিল।
সোমবারের তুলনায় আজ কমিশনে ভিড় ছিল কম। কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ দিন আমানতকারীর তুলনায় এজেন্টের সংখ্যা বেশি ছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.